ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ: ইশারাতেই আজও যাচ্ছে ৮৪০ কোটি
এখানে সবকিছু চলে হাতের ইশারায়– কি দিনের আলোয়, কি রাতের অন্ধকারে। প্রায় পাঁচ শ বছরের পুরোনো এই রাজধানী ঢাকায় যাঁর সামান্য যাতায়াত আছে, তাঁর কাছে বিষয়টি নতুন করে পরিচয় করানোর কিছু নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশে দিন দিন কমতে থাকা গতির শহরকে আরও গতিহীন করে দিচ্ছে মানুষের হাতের ইশারা।
বিষয়টা আরেকটু সহজ করা যাক। রাজধানী ঢাকার সড়ক সংযোগগুলোতে মোট ট্রাফিক সিগন্যাল আছে ১১০টি। এগুলোর একটিতে শুধু লাল-সবুজ বাতি জ্বলে-নেভে, বাকি সব অন্ধকার। সড়কে আরও আছে ৫৫০টির মতো স্থান, যেখানে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা হাত নেড়ে গাড়ি চলা ও থামার সংকেত দেন। সব মিলিয়ে এই সাড়ে ছয় শতাধিক স্থানে দায়িত্ব পালন করেন ২ হাজার ৭০০ পুলিশ সদস্য।
এবার খরচের হিসাবটা একটু দেখা যেতে পারে। সরকারি বেতন স্কেল অনুসারে এসব ট্রাফিক কনস্টেবলের পেছনে শুধু বেতন-ভাতা বাবদ মাসে ব্যয় হয় ৭০ কোটি টাকা। বছরে ৮৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছর শুধু যানবাহন চলাচলের ইশারা দিতেই এই বিপুল টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ রাস্তায় স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালের ব্যবস্থা করা গেলে যে খরচ হতো, তা এ তুলনায় খুবই কম।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, অঙ্কটা এত সহজ হলে ঢাকার রাস্তায় যান চলাচলের জন্য কেন স্বয়ংক্রিয় সংকেতের ব্যবস্থা করা হয় না। এই প্রশ্নে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, আগের প্রকল্প শেষ, নতুন প্রকল্প হলেই সব ঠিক হবে। আর ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাদের ভাষায়, ঢাকায় রাস্তার চেয়ে যানবাহন বেশি। সে কারণে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা কার্যকর হবে না। দুঃখের বিষয় হলো, এই বক্তব্যের বাইরে আছে একটি বিশেষ চক্রের হাত। যারা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা হোক, তা কোনোভাবেই চায় না। এদের কেউ সরাসরি লাভ খায়, আর কেউ দুধ থেকে আস্তে করে মাখনটা তুলে নেয়।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- ইশারা
- ট্রাফিক ব্যবস্থা