জ্বালানি এমন পদার্থ নয় যে চাইলেই ভোগ্যপণ্যের মতো অল্প সময়ে উৎপাদন বা আমদানি করে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো যাবে। এর অনুসন্ধান, আবিষ্কার, উৎপাদন, উত্তোলন, আমদানি, বিতরণ—প্রতিটি ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ এবং কারিগরি সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়।
ছোটকাল থেকে শুনে আসছি, বলেও আসছি—অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান মানুষের মৌলিক অধিকার। আর মৌলিক অধিকার প্রদান বা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তবে মানবসভ্যতার প্রাথমিক উন্মেষ হিসেবে যে ঘটনা বা সময়কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সেটা হলো, পাথরে পাথর ঘষে বন্য মানুষের আগুন জ্বালাতে শেখা এবং সেই আগুনে রান্না করা, শীতে বাতাস উত্তপ্ত করে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল জানা-বোঝা। আধুনিককালে সেই আগুন শরীর ও স্বাস্থ্যের আরও প্রয়োজন মেটায়। তাই যেখান থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়, সেই জ্বালানি প্রাপ্তিকেও বলা হচ্ছে, মানুষের অধিকার। কারণ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থান এবং প্রক্রিয়াকরণেও জ্বালানির জ্বলন আবশ্যিক। এখন তো আবার কোন দেশ কত উন্নত বা আয়েশি জীবনযাপনের আয়োজন কার কত আছে, সেটাও এই জ্বালানি পোড়ানোর পরিমাণে মাপা হচ্ছে।
আদিমকালে জ্বালানি ছিল পাথরে পাথরের ঘর্ষণ। এরপর খড়কুটো, কাঠ, সূর্যরশ্মি। তারপর কয়লা, তেল, গ্যাস, জল, বায়ু এবং ইউরেনিয়াম। আর সূর্য জ্বালানির চিরন্তন আধার।
উল্লেখ্য, বিদ্যুতের ব্যবহারকে সভ্যতার যে স্মারক রূপে ধরা হয়, হাল আমলের জল আর বায়ুবিদ্যুৎ বাদ দিলে বিদ্যুৎ তৈরিতে যে উত্তাপের প্রয়োজন, সেই আগুনের উৎস বা কাঁচামাল ওই জ্বালানিই। বিদ্যুৎ হচ্ছে শক্তি এবং জ্বালানির রূপান্তরেই উৎপাদিত হচ্ছে ব্যক্তির ব্যবহার্য বিদ্যুৎ।
এই ভূমিকার কারণ, আমাদের দেশে জ্বালানির অবস্থান, অবস্থা, আবশ্যিকতা ও গন্তব্য সম্পর্কে জানা। আমাদের ভূমিতে কী কী জ্বালানি ছিল বা আছে, আগে সে কথায় আসা যেতে পারে। খড়কুটো বা কাঠের কথায় এগোব না। কারণ, এটা প্রিমিটিভ ফুয়েল, যা প্রায় দেশেই আছে। পরিমাণের দিক দিয়ে যদিও এই জ্বালানি এখনো তৃতীয় বিশ্বে এবং আমাদের দেশে বেশি ব্যবহৃত; কিন্তু আধুনিক জীবনের আরও যেসব প্রয়োজন, উপকরণ, তা ওই জ্বালানি ব্যবহারে উপযোগী নয়।