মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ সশস্ত্র বাহিনী
ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং জাতীয় সংস্কৃতি একটি রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই সম্পদের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধে সামগ্রিকভাবে যখন সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং তার সদস্যরা সমৃদ্ধ থাকে তখন সেই জাতিরাষ্ট্রকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা বাঙালি সংস্কৃতি। আর দ্বিতীয় বড় সম্পদ মুক্তিসংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
পাকিস্তানের নির্যাতন, শোষণ ও নিগ্রহের বিরুদ্ধে আমরা ২৩ বছর সংগ্রাম করেছি। সেই সংগ্রামের বাঁকে বাঁকে যেসব চেতনা সৃষ্টিকারী অনুপ্রেরণাদায়ক ঐতিহাসিক মাইলফলক তৈরি হয়েছে, সেগুলো যত দিন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ পথ রচনার গাইডলাইন হিসেবে ব্যবহার করব, তত দিন বাংলাদেশ কখনো পথ হারাবে না।
রাষ্ট্রের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অনুপ্রেরণা ও চেতনা সৃষ্টির জায়গা লাগে। শূন্য থেকে চেতনা সৃষ্টি হয় না, অনুপ্রেরণাও জাগে না। নিরস্ত্র বাঙালির সংগ্রামী চেতনার কাছে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক ও লৌহমানব হিসেবে পরিচিত আইয়ুব খানের পতন এবং একাত্তরে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীর পরাজয় ঘটে। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধই হচ্ছে বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণার জায়গা। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠের মতো। একাত্তরের যুদ্ধ ছিল বৃহত্তর জনযুদ্ধ, তার অন্যতম অংশ ছিল যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনাবাহিনীর তৎকালীন বাঙালি সেনা সদস্যরা। সেই পথ ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম মুক্তিযুদ্ধের সময়, যুদ্ধক্ষেত্রে। এ রকম গৌরবের অধিকারী সশস্ত্র বাহিনী পৃথিবীতে খুব একটা বেশি নেই। সুতরাং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম বৈশিষ্ট্যের অন্যতম একটি দিক হলো জনসম্পৃক্ততা, অর্থাৎ জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জনগণের সঙ্গে যে বন্ধন, তা রক্তে গাঁথা।
দেশকে শত্রুমুক্ত করার আমরণ লড়াইয়ে একই জায়গায়, একই মাটিতে এবং একসঙ্গে রক্ত ঝরেছে এ দেশের সাধারণ মানুষ ও সেনা সদস্যদের। সুতরাং একটা জনবান্ধব সেনাবাহিনী দেশের মানুষ সব সময় প্রত্যাশা করে। তবে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সব সময় এক রকম ছিল না। বিশেষ করে স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় কিছু উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার কারণে মানুষ সেনাবাহিনী সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে থাকে। মানুষের ভাবনায় চলে আসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের আচরণের কথা। ১৯৭৫ সালের পর দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সামরিক শাসন জনগণ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। তাতে দেশ, জাতি ও সশস্ত্র বাহিনীর অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে সেসব কালো দিনের কালিমা পেরিয়ে সশস্ত্র বাহিনী আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ। সুতরাং নতুন প্রজন্মের সেনা সদস্যরা একাত্তরের ২১ নভেম্বর, অর্থাৎ সশস্ত্র বাহিনীর দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শুনতে চায়। তাই সে সম্পর্কে আমার নিজের কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সশস্ত্র বাহিনী দিবস