ডলার সংকট: পাচার ঠেকাতে মাঠে সিআইডি
সবুজ নামের এক ব্যক্তি গুলিস্তানে নতুন নোট কেনাবেচা করতেন। এখন তিনি ডলারসহ বিদেশি মুদ্রা বেচেন। তাঁর মতে, নতুন নোট বিক্রির চেয়ে এতে লাভ বেশি। তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা বিক্রি করি।’ বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার অনুমোদন আছে কি না, জানতে চাইলে সরাসরি জবাব না দিয়ে সবুজ বলেন, ‘আমি খুব সামান্য মুদ্রা কেনাবেচা করি, সব সময় পারিও না।’
দেশে অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ (মুদ্রা বিনিময়) প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সক্রিয় অনেক অবৈধ ভ্রাম্যমাণ মুদ্রা বিনিময়কারীও। কারও ডলার বা অন্য বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন হলে কিংবা কেউ বিদেশে অর্থ পাঠাতে চাইলে তাঁরা ব্যবস্থা করে দেন। এমনকি ধনী লোকজনকে বিদেশে অর্থ পাচার করতে তাঁরা প্রলুব্ধও করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অর্থ পাচার ঠেকাতে অনুমোদিত মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অবৈধ ভ্রাম্যমাণ মুদ্রা ব্যবসায়ীদেরও নজরদারিতে রেখেছে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, দেশে সহস্রাধিক ভ্রাম্যমাণ মুদ্রা বিনিময়কারী আছেন। তাঁদের কোনো দপ্তর নেই। হাতে ব্যাগ নিয়ে তাঁরা ঘুরে বেড়ান রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
নয়াপল্টনের একটি ট্রাভেল এজেন্সির ভ্রমণ সমন্বয়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণের সমন্বয় করে থাকি। ভ্রমণ করতে তাঁদের ডলারসহ বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন হয়। অফিসে বসেই এখন বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যায়। কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি আছেন, যাঁদের ফোন দিলেই বিদেশি মুদ্রা অফিসে এসে দিয়ে যান। তাঁদের দেওয়া মুদ্রা ভ্রমণকারীদের সরবরাহ করে থাকি। এতে কোনো ঝক্কিঝামেলা নেই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব কম বিদেশি মুদ্রা নিই। এটা বৈধ নাকি অবৈধ, তা আমরা জানি না।’
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম শাখার এক কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাংলাদেশ ব্যাংক কেবল অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড নজরদারি করে। তবে ভ্রাম্যমাণ অননুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জারদের কখনো নজরদারিতে রাখা হয় না। তাঁরা মানুষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসায় গিয়ে বিদেশি মুদ্রা দিয়ে আসেন। কেউ বিদেশে মুদ্রা পাঠাতে চাইলে তারও ব্যবস্থা করে দেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের কেউ কেউ এমএফএস ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। তাঁরা একটি ব্যাগ নিয়ে ঘুরে দেশের সর্বনাশ করেছেন।