গর্ভকালীন দাঁত ও মুখের যত্নে করণীয়
গর্ভকালে দাঁত ও মুখের ব্যাপারে যত্ন নিতে হবে। কারণ এ সময় শরীরে হরমোন নিঃসরণে পরিবর্তন ঘটে। মুখগহ্বরের সংক্রমণ ও মাড়িরোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। গর্ভকালীন চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ মাসে এবং শেষ তিন মাসে গর্ভবতীর মাড়িরোগের আশঙ্কা বেশি। তখন দাঁত ব্রাশের সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, এমনকি চাপ দিলে ব্যথা হওয়া- এসব উপসর্গ দেখা দেয়। আমেরিকায় মাড়িরোগ একাডেমির মতে, গর্ভকালীন মাড়িরোগের কারণে অকাল প্রসব ও কম ওজনের সন্তান জন্মদানের আশঙ্কা বেশি। তাই গর্ভধারণের আগে ও গর্ভকালে মুখগহ্বরের নিয়মিত পরীক্ষা গর্ভকালে কোনো জরুরি অবস্থা থেকে বাঁচাতে পারে। গর্ভকালে দাঁত ব্যথা হলে চিকিৎসা করা উচিত অবিলম্বে। দাঁতের ক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ দেখা দিলে দ্রুত সারিয়ে নেওয়া উচিত। বিলম্ব হলে গুরুতর ক্ষেত্রে তা মুখগহ্বরে সংক্রমণ, এমনকি পুঁজ হতে পারে।
গর্ভকালে দাঁতের জরুরি কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তা গর্ভকালীন চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ মাসে করা ভালো। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে ভ্রুণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে। এ সময় দাঁতের চিকিৎসা ভ্রুণের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। গর্ভকালীন শেষ তিন মাসে দাঁতের চিকিৎসা করানো ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় দাঁতের যেসব চিকিৎসার জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়, তা এড়িয়ে চলা ভালো। কোনো বাড়তি চাপ অকাল প্রসবের কারণও ঘটাতে পারে। মাড়ি ও দাঁত থেকে সংক্রমণ ঘটলে তা গর্ভজাত ভ্রুণে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এ সময় সংক্রমণ রোধে দরকার হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক। গর্ভকালে টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক গর্ভজাত সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। এতে নবজাতকের দাঁতের স্বাভাবিক রঙ বদলে গিয়ে উজ্জ্বল হলুদ কিংবা গাঢ় বাদামি রঙ ধারণ করতে পারে। গর্ভকালে দাঁতের অ্যামালগাম ফিলিং করালে এ ফিলিংয়ের পারদের কারণে ভ্রুণের ক্ষতি হতে পারে কি না, এ বিষয়ে অনেকে চিন্তিত থাকেন। যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বন করে এ ফিলিং করা হলে তা ভ্রুণের জন্য ক্ষতিকর নয়। চিকিৎসার জন্য লোকাল অ্যানেসথেটিক বা স্থানীয়ভাবে অবশ করার ইনজেকশন ব্যবহার করা হলে তা ভ্রুণের ওপর ক্ষতিকর কি না, তা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব খুব সামান্য। গর্ভকালে দাঁতের এক্স-রে না করাই ভালো। অবশ্য গর্ভজাত সন্তানের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব খুবই কম। জরুরি অবস্থায় এক্স-রে করার দরকার হলে গর্ভবতীকে বিশেষ ধরনের লিড অ্যাপ্রন পরিয়ে এক্স-রে করানো উচিত। এতে রঞ্জনরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মা ও গর্ভজাত শিশুকে দূরে রাখা যায়। গর্ভকালে শুধু দাঁতের জরুরি চিকিৎসাগুলো করানো উচিত। সৌন্দর্যবর্ধক চিকিৎসাগুলো প্রসবের পরে করানো উচিত। গর্ভকালে বমি বমি ভাব হওয়া, বমি করার সমস্যা দেখা দেয়। বমি হওয়ার পর ভালো করে কুলি করে ফেলা উচিত। কারণ বমির অম্লতা দাঁতের অ্যানামেল নামক আবরণে সূক্ষ্ম ক্ষয় সৃষ্টি করতে পারে। দাঁত হয়ে যেতে পারে সংবেদনশীল এবং সহজেই আক্রান্ত হতে পারে ক্ষয়রোগ বা ক্যারিজে। তাই গর্ভকালে নিয়মিত ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে দাঁত ও মুখ গহ্বর পরীক্ষা করানো দরকার।