যে গল্পের শেষ আছে
মানুষ জন্মের পর থেকেই নানা শৃঙ্খলে আবদ্ধ। নানা ধরনের বিধিনিষেধ তার ওপর অর্পিত হয়। আর এই বিধিনিষেধ মূলত নেতিবাচক নয়। কারণ সবই তার নিরাপত্তার জন্য। বেপরোয়া জীবনযাপন, উচ্ছৃঙ্খল আকাক্সক্ষা এসব থেকে তাকে নিরাপদ করার জন্য সমগ্র আয়োজন। সভ্যতার একটা পর্যায়ে আইনকানুন এসব বিকশিত হয় কিন্তু সেগুলো থাকে শক্তিশালী মানুষের হাতে। কিছুটা দমন-নিপীড়নের জন্য এর বিরুদ্ধেও মানুষ লড়াই করেছে, গণতান্ত্রিক আইন প্রণয়ন করেছে। বহু দলে, সম্প্রদায়ে বিভক্ত মানবগোষ্ঠীকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা চলেছে। সবচেয়ে বেশি চিন্তা করা হয়েছে একটা বয়সের মানুষকে নিয়ে, সেটি হচ্ছে স্কুলে যাওয়ার পর থেকেই শিক্ষা সমাপনী পর্যন্ত।
একদিকে অলিখিত পারিবারিক শৃঙ্খলা, অন্যটি রাষ্ট্রের আইন। মানুষের বোধোদয় থেকেই তাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার বিরামহীন প্রচেষ্টা চলেছে। এ সময়টায় রাষ্ট্রের আইন সাধারণত প্রয়োজন হয় না, অলিখিত আইন দিয়েই চলে এ সময়টা। এ সময় তরুণ ছাত্ররা বিদ্রোহ করে, আন্দোলন করে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটা সংগ্রামে লিপ্ত হয়। তার মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধ তার বাকি জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে।
আমাদের জীবনে ষাটের দশক এক উত্তাল বিদ্রোহের সময়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জ্বলে উঠেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সংগ্রামে, মিছিলে। অন্যদিকে পাকিস্তানের কুখ্যাত নিষ্ঠুর বাহিনীর নিপীড়ন, কখনো আইনকে ব্যবহার করে, কখনো বেআইনিভাবে বুলেট দিয়ে চলে নির্যাতন। আজও সেই বুটের শব্দ শুনতে পাই। সে সময় কোনো ছাত্রাবাসে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার ধর্মঘটে অসহযোগে কেউ কখনো অনিরাপদবোধ করেছে এমন তথ্য খুব কমই পাওয়া গেছে। অভিভাবকদের উৎকণ্ঠার পরও ছাত্ররা ছাত্রাবাসেই থেকেছে। এর মধ্য দিয়েই ভালো ছাত্ররা ভালো ফলাফল করে বিভিন্ন চাকরিতে যোগ দিয়েছে। আবার অধিকাংশ ছাত্র আন্দোলনে শরিক হয়েছে। আজও সেই সময়ের মানুষদের কাছে এ এক সুবর্ণ সময়। কিন্তু বর্তমানে স্বাধীন দেশে সবচেয়ে অনিরাপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষাঙ্গন, হল, হোস্টেলসহ সর্বত্র। হোস্টেল, হল বা যেকোনো ছাত্রাবাসে নিয়োজিত শিক্ষকরা বাধ্য হয়েই নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলছে। কারণ সবাই রাজনীতির অন্ধ কানুনে আবদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাষ্ট্র সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি, শিক্ষকদের প্রতি একটা প্রবল অনাস্থার জন্ম হয়েছে। অনাস্থা এবং অবিশ্বাসকোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই সাময়িক। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা একজন শিক্ষার্থীর মনে চিরকালের জন্য প্রভাব ফেলে। আজকের কোনো তরুণ-তরুণীর মধ্যে শিক্ষকদের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা জাগে না, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি কোনো আস্থার সৃষ্টি হয় না, সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের প্রতি একই ধরনের মানসিকতা তারা পোষণ করে থাকে। এ এক ভয়ংকর পরিস্থিতি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পারিবারিক
- বিদ্রোহী
- পারিবারিক দ্বন্দ্ব