সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা ঠিক হবে না
বাংলাদেশের সংবিধানের ৫০ বছর পূরণ হতে যাচ্ছে ৪ নভেম্বর। বিভিন্ন মহল থেকে সংবিধান সংস্কারের দাবির কথা জানানো হচ্ছে। সংবিধানে ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। তার কতটা জনগণের স্বার্থে আর কতটা শাসকদের স্বার্থে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সংবিধানের নানা দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন আবদুল্লাহ আল ফারুক।
আবদুল্লাহ আল ফারুক: সংবিধান যেকোনো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি দলিল এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। সংবিধান একটি চলমান দলিল এবং পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের কারণে এটি সংশোধিত হয়। কারণ, এটি কোনো অপরিবর্তনীয় বিষয় নয়। অনেক চড়াই–উতরাই পার হয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল চরিত্রে ফিরে এসেছে অনেকটাই। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে সংবিধান সংস্কার হতে পারে। তবে যেসব বিষয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সংশোধিত, সেগুলো নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই এবং সেসব বিষয়ে সংবিধানের সংস্কারের দাবিও অবান্তর। সংবিধান পরিচালনার দায়িত্ব মূলত রাষ্ট্রের তিন অংশের—শাসন বা নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ। সাংবিধানিক বিধিবিধান বলবৎ করা এবং সমুন্নত রাখার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের। আইন বিভাগ বা পার্লামেন্ট সংবিধানের সঙ্গে সংগতি রেখে আইন প্রণয়ন করবে এবং বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক এবং ব্যাখ্যা দাতা। এ ছাড়া জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে সংবিধানকে সম্মান করা এবং সাংবিধানিক বিধিবিধান মেনে চলা।
১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান ছিল সমসাময়িক কালের অন্যান্য দেশের সংবিধানের চেয়ে উন্নত এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং এর রাষ্ট্রীয় পরিচালনার মূলনীতি সমূহ থেকে এটি প্রতীয়মান হয় যে সংবিধান প্রণয়নের সময় জনগণের সার্বভৌমত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং শোষণহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধান রচিত হয়েছে একটি ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি’র মাধ্যমে। এই কমিটি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়োগ এবং গণপরিষদে যথেষ্ট বিতর্ক ও পর্যালোচনার মাধ্যমে, সর্বোপরি একটি গণতান্ত্রিক ও প্রচলিত পদ্ধতির মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধান গৃহীত হয়।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্যরা দলত্যাগ বা ফ্লোর ক্রস করতে পারেন না। তবে এই অনুচ্ছেদ পুরো বাতিল করা ঠিক হবে না। কারণ, এর ফলে সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে। কারণ, ইতিপূর্বে অর্থ লোভের কারণে পাকিস্তান আমলে দলত্যাগের নজির আছে। ভারতেও দলত্যাগ নিয়ে নানা সমস্যা আছে। এ ছাড়া ৭০ অনুচ্ছেদটি সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনেকটাই ১৯৭২ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের অনুরূপ রূপ ফেরত পেয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের রাজনীতির সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট এক নয়। এদিক থেকে বিবেচনা করলে ৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করা ঠিক হবে না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সংবিধান সংশোধন
- বাতিলের দাবি