প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য প্রয়োজন ন্যায়পাল
এ কথা অনস্বীকার্য দেশ, সমাজ, সংসারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা-প্রয়োগের প্রধান পূর্বশর্ত হলো ব্যক্তিজীবনে শুদ্ধাচারিতা। ব্যাষ্টি থেকেই সমষ্টি। সঠিক জীবনদৃষ্টি প্রয়োগ করে মেধা ও প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকশিত সমাজে ‘স্ব-উদ্যোগ, স্ব-পরিকল্পনা ও স্ব-অর্থায়ন’ দ্বারা সৃষ্টির সেবায় সংঘবদ্ধভাবে সম্পাদিত কাজই ‘অশান্তিকে প্রশান্তিতে, রোগকে সুস্থতায়, ব্যর্থতাকে সাফল্যে, অভাবকে প্রাচুর্যে রূপান্তরিত করতে পারে।’
ব্যাষ্টি ও সমষ্টির জীবনে ন্যায়নীতিনির্ভরতার প্রত্যয়, শুদ্ধাচার বা সদাচার চর্চার তাত্পর্যময় আবশ্যকতার কথা তাবৎ ঐশী গ্রন্থে, ধর্ম প্রবর্তক-প্রচারকের বাণীতে, সক্রেটিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০-৩৯৯), প্লেটো (খ্রিস্টপূর্ব ৪৩৭-৩৪৭), অ্যারিস্টটল (খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২) এমনকি কৌটিল্যের (খ্রিস্টপূর্ব ৩৭৫-২৮৩) অর্থশাস্ত্রেও ছিল। সে সদাচার শুদ্ধাচারের চর্চা অবলম্বন অনুসরণ যুগে যুগে নানান প্রেক্ষাপটে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটেছে। সদাচার সুশাসন লোপ পেলে ব্যক্তি সমাজ সংসার নিপতিত হয়েছে নানান অরাজক পরিস্থিতিতে। মানব সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সূচনা, বিকাশ-বিবর্তনও ঘটেছে শুদ্ধাচারের প্রতি আকিঞ্চন আকাঙ্ক্ষা ও দায়বদ্ধতা থেকে। শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে, সহযোগিতা-সহমর্মিতার স্বার্থে, ন্যায়নীতিনির্ভরতার স্বার্থে ও তাগিদে সুশাসনকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। ন্যায়নীতি নির্ভরতার মূল্যবোধ যে সমাজে যত বেশি বিকশিত, পরিপালিত, অনুসৃত হয়েছে সে সমাজ তত সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পেরেছে। বিপরীত অবস্থায় বিপন্ন বিপর্যস্ত হয়েছে বহু সমাজ ও সম্প্রদায়।
সর্ববিধ বিবেচনায় নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, রাজপথে রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন দাবি বা অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের প্রতিও সরকারি বাহিনীর বেপরোয়া আচরণ, বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের মতো অর্থনীতির সমূহ সর্বনাশ সাধন, সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রতিকার না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো দিন দিনই সাধারণ মানুষকে যাতে আরো উদ্বিগ্ন করে না তোলে, কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কার্যকলাপ জবাবদিহিতার বাইরে চলে যাওয়ার মতো ঘটনার প্রতিকার পেতে একজন সাংবিধানিক ন্যায়পালের আবশ্যকতা উঠে আসছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করছেন, ন্যায়পাল সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আনবে জবাবদিহিতার মধ্যে, একজন ন্যায়পাল থাকলে সরকারকে মুখোমুখি হতে হবে না অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিরও। চানক্য পণ্ডিতের মতো অনেকে এটাও বলছেন, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রশাসনকে করতে পারে শক্তিশালী। কেননা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে সরকারের প্রতি আস্থা হারাতে পারে সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি এ আস্থাহীনতাই জন্ম দেয় সামাজিক অনাচার ও রাজনৈতিক সহিংসতার।