নিত্যসমস্যায় জর্জরিত মানুষ, সমাধান চায়
আমি একবার হংকংয়ে একটি চলচ্চিত্রের টেকনিক্যাল কাজে গিয়েছিলাম। প্রায় সাত দিন সাত রাত ল্যাবরেটরিতে বসে কাজ করছিলাম। কিন্তু খুবই আশ্চর্য হয়ে গেলাম, সাত দিনে একবারের জন্যও বিদ্যুৎ যায়নি! সে রকম অভিজ্ঞতা আমার থাইল্যান্ডেও হয়েছিল। সেখানেও দশ দিনে একটি বারের জন্য, এক সেকেন্ডের জন্যও বিদ্যুৎ যায়নি।
হংকংয়ে ওই ল্যাবরেটরির মাঝবয়সী এক লোককে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোমাদের এখানে বছরে কবার বিদ্যুৎ যায়?’ ভদ্রলোক আমার কথা বুঝতেই পারলেন না। অনেকক্ষণ পর সে মাথা নাড়ল, ‘হ্যাঁ, মাঝে মাঝে যায়। আমাদের মেইন সুইচের সার্কিটের তারটা মাঝে মাঝে পুড়ে যায়। আমরাই ওটাকে মেরামত করি, আবার ঠিক হয়ে যায়।’ আমি তখন প্রাণপণে বোঝানোর চেষ্টা করি, সেই যাওয়ার কথা বলছি না। একেবারে পাড়া, গ্রাম, শহরজুড়ে যাওয়ার কথা বলছি। এবার সে একেবারে বোকা বনে গেল। বলল, ‘পৃথিবীর কোথাও এ রকম বিদ্যুৎ যায় নাকি? আমার যে এত বয়স হয়েছে, আমি তো কখনো দেখিনি বিদ্যুৎ যেতে।’ সে এটাও বলল, ‘বিদ্যুৎ যদি বাতাসের মতো যায়, তাহলে তো মানুষ মারা যাবে! লিফট বন্ধ হয়ে যাবে, বাড়িঘর অন্ধকার হয়ে যাবে, পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে, কম্পিউটার সিস্টেম বন্ধ হয়ে যাবে। এসবের সঙ্গে কলকারখানা তো আছেই।’ সে খুব উৎসাহের সঙ্গে প্রশ্ন করল, ‘তোমাদের ওখানে এ রকম হয় নাকি?’ আমি বললাম, ‘হয় মানে! ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।’
গ্রামের লোকেরা বলে, আমাদের এখানে বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে আসে। অবাক বিস্ময়ে সিগারেটে দুটো টান দিয়ে সে বলে, তোমরা বেঁচে আছ কী করে? আমি বললাম, এই তো দিব্যিই বেঁচে আছি। কারণ, আমাদের সূর্য দিনের বেলা আলো দেয়, আর চন্দ্র রাতের বেলা আলো দেয়। হারিকেন চেনো, হারিকেন, মোমবাতি এসব আছে আমাদের। আর তোমাদের দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ টর্চলাইট আমাদের দেশে যায়। আর যেসব কথা বলিনি তা হলো, আমাদের দেশে আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন করি, কখনো কখনো এক-চতুর্থাংশ চলে যায় লাইন বা সিস্টেম লসে। যতটুকু উৎপাদন করি, তার বিনিময়ে আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের কোম্পানি সেই টাকাও পায় না। বিদ্যুৎ বিভাগে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা অধিকাংশই রাতারাতি বড়লোক হয়ে যান।