আমলারা কেন রাজনৈতিক খেলার পুতুল?
তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। আচমকা এ সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাঝে এক ধরনের অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়েছে বলে অনুভূত হচ্ছে। পরিস্থিতি তুলে ধরতে সমকালের শিরোনামটিই যথেষ্ট- 'থমথমে প্রশাসনে ফিসফাস'। (১৮ অক্টোবর, ২০২২)। সব জায়গাতেই এ নিয়ে আলোচনা- কেন এমন হলো! এই 'কেন' খুঁজতে গিয়ে অনিবার্যভাবেই ছড়াচ্ছে গুজবের ডালপালা। এমনও শোনা যাচ্ছে, জনপ্রশাসনের আরও অন্তত ১০ জন সিনিয়র কর্মকর্তা নাকি মকবুল হোসেনের ভাগ্য বরণের অপেক্ষায়।
মকবুল হোসেনের মতো সচিব পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার এমনতর বাধ্যতামূলক অবসরবরণের নজির নিকট অতীতে আছে বলে আমার জানা নেই। কয়েক বছর আগে, খুব সম্ভবত ২০১২ সালে চারজন সচিবকে ইস্তফা দানে বাধ্য করা হয়েছিল। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট জালিয়াতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। আশা করা হয়েছিল, সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। তা না করে তাঁদেরকে সসম্মানে বিদায়ের নিমিত্তে ইস্তফা দিতে বলা হয়েছিল এবং তাঁরা জালিয়াতির অভিযোগ নিয়েও সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিয়েছিলেন। কিন্তু মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের কথা এখনও শোনা যায়নি।
যখন কোনো অভিযোগ ছাড়াই কাউকে এভাবে বিদায় নিতে হয়; স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া হয়, তাঁর বিরুদ্ধে অধিকতর গুরুতর কোনো অভিযোগ আছে। সেই অধিকতর গুরুতর অভিযোগটা যে রাজনৈতিক, তা ভাবা যায়। মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে যেহেতু প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড-সংশ্নিষ্ট কোনো অভিযোগের কথা এখনও শোনা যায়নি; ধরে নেওয়া যায়, তাঁর বিষয়টিও রাজনৈতিক। আতঙ্কের কারণটা ওখানেই।
পত্রিকান্তরে যেসব খবর বেরিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয়; সব জায়গাতেই জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা অনেকের মধ্যেই গত কয়েক দিনে এই বাধ্যতামূলক অবসরের আশঙ্কা সংক্রমিত হয়েছে। এই নিবন্ধ যেদিন লিখছি, সেদিনও খবর প্রকাশ হয়েছে- পুলিশ সুপার পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকেও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। খবরের শিরোনাম- এবার 'জনস্বার্থে' অবসর তিন পুলিশ কর্মকর্তার। (সমকাল, ১৯ অক্টোবর, ২০২২)।
এটি যে সার্বিকভাবে প্রশাসনের জন্য মঙ্গলবার্তা নয়, তা বলা বাহুল্য। বিশেষ করে যখন নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২৪-এর জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, এ সময়ে সরকারের এমনতর সিদ্ধান্ত জনমনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।