সঠিক সময়ে ভালো খবর
যখন বিএনপি মহাসচিব মনে করেন এখনকার বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিলেন আর বলেন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত শুধু র্যাব নয়, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া, তখন মির্জা ফখরুলের ইতিহাস জ্ঞানের খুব বেশি তারিফ করতে পারছি না। যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি নিষেধাজ্ঞা সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে ইরাকের বিরুদ্ধে দিয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা চলাকালে চিকিৎসা, ওষুধপত্র ও শিশুখাদ্যের অভাবে ইরাকে কয়েক লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। বাংলাদেশেও এমনটা হোক মির্জা ফখরুল কি তা-ই চান? চান বৈকি, তা না হলে তাঁর মতো একজন শিক্ষিত মানুষ এমন দেশবিরোধী বক্তব্য কিভাবে দেন? রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাতে রাশিয়ার তেমন বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর ত্রাহি অবস্থা। এসবের প্রেক্ষাপটে যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী চট্টগ্রামে বিএনপির মঞ্চ থেকে বাবার মতো হুংকার দিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার আগে তাঁর বাবাসহ ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সব যুদ্ধাপরাধীর বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আসতে হবে (তাঁর ভাষায় শহীদ)।
যখন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালকে ‘আওয়ামী অধিকার’কর্মী বলে গালাগাল করেন, কারণ তিনি জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত মানবাধিকার বিষয়ে প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে তথ্যে ভুল ধরিয়ে দেন, যখন প্যারিসে পলাতক একজন জালিয়াত ডা. ভট্টাচার্য শেখ হাসিনার শেষ দিনগুলো নিয়ে তাঁর ইউটিউবে আগাম বর্ণনা দেন, আর যখন বিএনপি আগামী নির্বাচনের আগে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির সব হোমওয়ার্ক সেরে ফেলছে, ঠিক তখন সুদূর নিউ ইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে মন ভালো হওয়ার ভালো খবরটি এলো গত ১১ তারিখে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্ল্যানারি সেশনে তাক লাগানো ১৬০ ভোট পেয়ে পরিষদের নির্বাচনে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। জাতিসংঘের এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় বাংলাদেশের এটি পঞ্চম বিজয়, যার চারটি এসেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০৯ সালের পরের তিনবারে মেয়াদকালে। সরকার সঠিকভাবেই এই বিজয়কে ঐতিহাসিক বলেছে। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাঁকে ও প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যদের অভিনন্দন। বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য গ্রুপ থেকে আরো ১৩টি দেশ এই মর্যাদাপূর্ণ সংস্থার সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। সদস্য পদের মেয়াদকাল তিন বছর, যা শুরু হবে আগামী বছর।
জাতিসংঘের এই মর্যাদাপূর্ণ সংস্থার সদস্য হওয়াটা বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ নিয়মিত বিরতি দিয়ে দেশে ও দেশে বাইরে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেকেই অসত্য-অর্ধসত্য তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রচার করে সরকারকে বিব্রত করে। এ ছাড়া বিএনপি ও তাদের সমমনা দল আর কিছু বাম ঘরানার ব্যক্তি ও তামাদি হয়ে যাওয়া বাম দল প্রতিনিয়তই বলে বেড়ায় বাংলাদেশে কোনো মানবাধিকার নেই। বিএনপি প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারকে উত্খাত করার জন্য দলীয় সভা করে যাচ্ছে। এর পরও বলে, এই সরকারের আমলে দেশে মানবাধিকার এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে তারা কোথাও সভা করতে গেলে তাদের নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়। বিএনপি ভুলে গেল ২০০১-০৬ সালে তারা যখন জামায়াতকে নিয়ে ক্ষমতায় ছিল তখন আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তারকাঁটায় ঘের দেওয়া ২০ হাত জায়গা ছাড়া আর কোনো জায়গায় সভা করতে দেওয়া হতো না। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ওই স্থানেই সভা করতে গেলে তাঁকেসহ দলের সিনিয়র নেতৃত্বকে হত্যা করার জন্য খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র, বর্তমানে পলাতক তারেক রহমানের পরিকল্পনায় এক ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করা হয়। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও কর্মীদের আত্মত্যাগের কারণে সেই যাত্রায় শেখ হাসিনা বেঁচে যান। তবে সেই থেকে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা এখনো বহাল আছে। আর তাইতো বিএনপির সভা-মিছিল থেকে নিয়মিত স্লোগান ওঠে ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। ’