বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দা ও শেখ হাসিনার কূটনীতি
২০২০ সালের শুরু থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সব দেশে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে করোনা অতিমারি। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য খাত ভেঙে পড়েছিল সেই সময়। প্রত্যেকটা দেশের সরকার অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্ব প্রদান করেছিল মানুষের জীবন রক্ষার দিকে। করোনা অতিমারির প্রাথমিক পর্যায়ে যেভাবে মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে, তাতে পৃথিবীর সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মূল দায়িত্ব হয়ে পড়েছিল কীভাবে জনগণের জীবন রক্ষা করা যায়। তবে জনগণের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় করোনার টিকা বা ওষুধের সঙ্গে মানুষের জীবিকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কারণ, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার ছিল লকডাউন বাস্তবায়ন করা। আর এই লকডাউনের সময় মানুষকে ঘরের মধ্যে অন্তরীণ থাকতে হয়েছে। সে সময় জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রত্যেক দিনের শ্রমের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জন্য জীবন অতিবাহিত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিল। কারণ, মাসের পর মাস লকডাউন বাস্তবায়নের ফলে জীবিকার বিষয়টি তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব এই দরিদ্র মানুষদের সহায়তা করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টার ফলে করোনার টিকা আবিষ্কৃত হয়। সেই সময় ভ্যাকসিন কূটনীতিতে শেখ হাসিনা অনবদ্য হয়ে উঠেছিলেন। তিনি খুব দ্রুত দেশের বেশিরভাগ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও প্রদান করার মাধ্যমে জনগণের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতা অনেক বেশি ছিল। সার্বিকভাবে করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর অনেক দেশের কাছে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশ যখন করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে পুনরায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেষ্টা শুরু করেছে, ঠিক সেই সময় রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ পৃথিবীকে পুনরায় অস্থির করে তুলেছে।
প্রথম দিকে মনে করা হয়েছিল যুদ্ধ খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না, কিন্তু পরবর্তীতে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী আকার ধারণ করলে পৃথিবীব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যায়।
এই মন্দার ফলে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কার উদাহরণ প্রত্যক্ষ করেছি। এছাড়া, যুক্তরাজ্যসহ অনেক বড় বড় অর্থনীতির দেশে মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে এর মূল্য বৃদ্ধি করতে বাধ্য হচ্ছে প্রায় সব দেশের সরকার। ইউরোপের দেশসমূহ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না বিধায় সরকার বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে জনগণকে সাশ্রয়ী হবার আহ্বান জানিয়েছে।