নির্বাচন, কমিশন, প্রশাসন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে আর দেড় বছরেরও কম সময় বাকি আছে। তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে কথাবার্তাও সেভাবেই চলছে। বড় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে এবং কমিশনসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল এখন তাই নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম।
গত শনিবার জেলা পরিষদ নির্বাচন ও অন্যান্য নির্বাচন নিয়ে ডিসি-এসপিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সেখানে এমন কিছু প্রসঙ্গ তুলেছেন তিনি যেগুলো নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সিইসি বলেছেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি)-দের দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মসূচি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশের ডিসি-এসপিরা কি দলীয় কর্মী? বা তারা এভাবেই দায়িত্ব পালন করেন? বলেছেন, এবার নির্বাচন কমিশন শক্ত অবস্থানে থাকবে। এর অর্থ হলো, অন্য সব নির্বাচনের সময় কি কমিশন শক্ত অবস্থানে ছিল না? কিন্তু একথা তো সত্যি যে নিকট অতীতে অনেক ভালো নির্বাচন হয়েছে। এই সভায় তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। কীসের ভিত্তিতে তিনি এই আশা করছেন, সেটা পরিষ্কার নয়; যেখানে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সঙ্গে তার সংলাপটাই অংগ্রহণমূলক হয়নি। তার ডাকে বিএনপি ও বাম ঘরানার বড় দলগুলো যায়নি সংলাপ করতে। ইভিএম বিষয়ে তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে ভোটারদের আরও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, খোদ ইভিএম নিয়েই তো কোনও সমঝোতা হলো না এখন পর্যন্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি তো বিরোধিতা করছেই, সিপিবি-বাসদও এর বিরুদ্ধে বলছে। সরকারের অংশীদার বা অনুগত বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টিও এখন ইভিএম বিরোধী। প্রশ্ন হলো, কীসের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ১৫০ আসনে ইভিএম-এ ভোট নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে? ৩০০ আসনেই বা কেন ইভিএম-এ ভোট নয়? এমন প্রশ্নের উত্তরও আশা করি কমিশনের কাছে নেই। সবশেষ, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে বলেছেন, প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী নামানো হবে। প্রয়োজনটা কেন তিনি বোধ করছেন না, তার ব্যাখ্যাই বা কী?
দেশে নিয়মিত নির্বাচন হয়। নানারকম নির্বাচন হয়। স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় সব নির্বাচনকেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যথেষ্ট গুরুত্বও দেন। তীব্র গরম বা শীতেও তারা প্রচারণা চালান। নির্বাচন কমিশনও প্রচুর শ্রম ও অর্থব্যয় করেন। কিন্তু নির্বাচনের যে প্রধান অংশীজন- ভোটার– তাদের কথা কি কোথাও ভাবা হয়?