ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র হয়নি ৪৩ বছরেও
‘উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা’ স্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আশির দশকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদে উল্লেখযোগ্য অবস্থান ছিল এই ছাত্র সংগঠনটির। নব্বইয়ের আন্দোলন কিংবা এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামেও সামনের সারিতে দেখা গেছে ছাত্রদলকে। যদিও বর্তমান সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে সংগঠনটির অতীত ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। ৩০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ২২ সহসভাপতি, ৮২ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৬২ সহসাধারণ সম্পাদক এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদকই ৩৮ জন। জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটির আকারও একইরকম। ‘টাউস’ কমিটির কারণে অযোগ্য ও নিষ্ক্রিয়রাও নেতা হচ্ছেন। যে কারণে অতীত ঐহিত্য হারাচ্ছে বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’খ্যাত এই সহযোগী সংগঠনটি। এছাড়া ৪৩ বছরেও একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত ‘খসড়া’ গঠনতন্ত্র দিয়ে চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম।
ছাত্রদলের সাবেক নেতারা জানান, ১৯৯৭-৯৮ সালের কমিটির সময় ‘খসড়া’ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হয়। তবে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ায় সাংগঠনিক গঠনতন্ত্রের স্থায়ীরূপ দেওয়া হয়নি। বিএনপির শীর্ষ মহল থেকেও কোনো চাপ ছিল না, আবার যারা দায়িত্বে এসেছেন-তাদের কাছেও বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে। যদিও ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। একটি ‘খসড়া’ও চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু কমিটিতে তা এখনো পাশ হয়নি। এছাড়া ছাত্রদলকে দেখভালের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের পদও রয়েছে। কিন্তু ছয় বছর ধরে সে পদও ফাঁকা আছে। এখন সংগঠনটির সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে কমিটির নেতারা সারা দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সাবেক ছাত্রনেতারা আরও জানান, জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন, তখন ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরির জন্য একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ১৬১ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। এরপর এ পর্যন্ত আরও ২৩ বার নতুন কমিটি করা হয়। এর মধ্যে ছয়বার নির্বাচনের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সব কেন্দ্রীয় কমিটির আকার দুইশর মধ্যে রাখা হয়। কিন্তু এরপর কমিটির আকার বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি হয় ২৩৫ সদস্যের, ২০১২ সালে বেড়ে হয় ২৯১ সদস্যের, ২০১৪ সালে আরও বেড়ে হয় ৭৩৬ সদেস্যর। যদিও ২০১৯ সালে আংশিক কমিটি ছিল ৬০ সদস্যের। সবশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে ৩০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও এর মধ্যে বিবাহিতসহ নানা অভিযোগে ৩২ জন নেতার পদ স্থগিত রাখা হয়েছে।