সংবাদমাধ্যমের টিকে থাকার লড়াই
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসারের যুগে প্রচলিত সংবাদমাধ্যমগুলো এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী, নামকরা সংবাদমাধ্যমগুলোও এখন টিকে থাকার জন্য নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। টিকে থাকতে না পেরে, ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার উদাহরণও কম নেই। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষের আস্থাভাজন বিবিসি রেডিওর বাংলা সম্প্রচার বন্ধ তারই সবশেষ সংযোজন। সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো আস্থার সংকট। মানুষ এখন সংবাদমাধ্যমে যা পড়ে বা দেখে, তার সবটাই বিশ্বাস করে না। সংবাদমাধ্যমের মান উন্নয়নে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা, এমআরডি আইয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় আস্থার এ সংকটের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। দেশের সব কটি বিভাগে পরিচালিত ওই জরিপে দেখা গেছে, পুরোপুরি আস্থা রাখতে না পারলেও, যেহেতু গুজব এবং ভুয়া তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বেশি ছড়ায়, ফলে এখনো সঠিক তথ্য জানা ও যাচাইয়ের জন্য প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের ওপরেই ভরসা করে মানুষ। প্রয়োজনে একাধিক পত্রপত্রিকা বা টেলিভিশনের প্রতিবেদনের মধ্যে তুলনা করে তারা একটি ঘটনার সঠিক চিত্র বোঝার চেষ্টা করে।
সংবাদমাধ্যমের এই ভোক্তা অংশটির সঙ্গে কিন্তু সংবাদকর্মীদের তেমন কোনো যোগাযোগই নেই। ফলে পাঠক-দর্শকের সঙ্গে নিউজ রুমের একটি বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলোর এই পরিস্থিতির পেছনে মালিকানার স্বার্থরক্ষা ও রাজনীতিকরণ, নিয়ন্ত্রণমূলক আইন, বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরতা, সর্বোপরি গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবই দায়ী। এই পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমগুলো যদি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায়, তাহলে সেটা কী হতে পারে সম্প্রতি তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন সংবাদকর্মী, সংবাদমাধ্যমের উন্নয়নে কাজ করছেন এমন উন্নয়নকর্মী এবং সাংবাদিকতা বিষয়ে অধ্যাপনা করেন এমন কয়েকজনের একটি দল। সুইডেনভিত্তিক ফোয়ো মিডিয়া ইনস্টিটিউট এবং নিরাসের একটি ফেলোশিপের অংশ হিসেবে, ৬ সদস্যের এই দলটি এক বছর ধরে বিশ্বের চারটি দেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে, নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সিদ্ধান্ত গ্রহীতা এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। তারই ভিত্তিতে তারা বর্তমান বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের সংকট মোকাবিলায় টেকসই সাংবাদিকতার কথা বলেছে।