রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতা কি আরও বাড়বে?
অবশেষে ইউক্রেনের দোনেস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হলো। ৩০ সেপ্টেম্বর মস্কোর ক্রেমলিন প্যালেসের সেন্ট জর্জেস হলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ইউক্রেনের এ চারটি অঞ্চল রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্তের ঘোষণা দিলেন। পুতিন বলেন, তিনি চান ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব জানুক, দনবাস অঞ্চলের মানুষ চিরতরে রাশিয়ার নাগরিক হয়ে যাবে। কিয়েভ সরকারের উচিত জনগণের এ ইচ্ছার অভিব্যক্তিটিকে ‘সম্মান দেখানো।’ অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও ওই চার অঞ্চলের রুশ মনোনীত নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার এ পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং একইসঙ্গে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। অপরদিকে ইউক্রেন উল্লেখিত এলাকা উদ্ধারের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।
রাশিয়া বলেছে, গণভোটের ফলাফল ঘোষণার পর এ চার অঞ্চলের শাসকদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাদের রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করতে প্রেসিডেন্ট পুতিন এ সংক্রান্ত দলিলে স্বাক্ষর করেছেন। রাশিয়ার এমন পদক্ষেপের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বন্দুকের নলের মুখে দাঁড় করিয়ে ভোটারদের ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। কাজেই রাশিয়ার এ গণভোটের কোনো মূল্য নেই। তাতে বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। ইউক্রেন গণভোটের এ ফলাফলকে নাকচ করে দিয়েছে। তারা বলেছে, ভোট এবং ভোটের ফলাফলকে তারা কোনোমতেই গ্রহণ করবে না। পশ্চিমা দেশগুলোও এ গণভোটকে জালিয়াতির ভোট বলে বর্ণনা করেছে। অপরদিকে এ গণভোটকে সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, এসব অঞ্চলে বসবাসরত নাগরিক ‘জাতিগত রাশিয়ান’। রাশিয়ান ভাষাভাষী জনগণের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করার জন্য ভোটের আয়োজন করা হয়েছে। রাশিয়ার দখলকৃত যুদ্ধবিধ্বস্ত এ চারটি অঞ্চলের প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। গণভোট দিয়ে ইউক্রেনের অঞ্চল রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ২০১৪ সালে গোটা ক্রিমিয়া নিজেদের দখলে এনে গণভোট দিয়ে রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। এবার যে চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাতে ইউক্রেন, ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার অর্থাৎ তাদের মোট ভূখণ্ডের ১৫ শতাংশ হারাবে। এ পরিমাণ এলাকা, ইউরোপের হাঙ্গেরি অথবা পর্তুগালের মতো দেশের সমান। এসব অঞ্চল হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় ইউক্রেনের কৃষি উৎপাদন কমে যাবে ১৩ থেকে ১৬ শতাংশ। তবে রাশিয়া দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ ভূখণ্ড দখল করতে পারেনি। ৪০ শতাংশ ভূখণ্ড এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে। এ কারণে দোনেৎস্কে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া।