বাঙালির আত্মপরিচয়ের ধান ফসল বীজ

দেশ রূপান্তর হরিপদ দত্ত প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৩০

বাঙালি সাহিত্যের গদ্যভাষাটা সম্পূর্ণ আলাদা। জীবনধর্মী ভাষায় নতুন নতুন শব্দ এতে স্থান পায়। ঔপনিবেশিক যুগে যা ছিল কল্পনার অতীত, সেই পূর্ববঙ্গের ‘মুসলমান প্রজার ভাষা’ পাকিস্তান পর্বেই বাঙালির সাহিত্যে স্থান পেল। হাজার বছরের সাহিত্যিক বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে চাইল একটি সমাজ। প্রতিভার অভাবে তা পূর্ণতা যে পায়নি, তা সত্য। ‘মুসলমান’ না ‘বাঙালি’ এই আত্মদ্বন্দ্বেও বহু প্রতিভা বিনষ্ট হয়ে গেছে। এই আত্মদ্বন্দ্ব রাজনীতির যতটা ক্ষতি করেছে তার অধিক ক্ষতি করেছে সাহিত্যের।


একাত্তরের যুদ্ধ বাংলাদেশের বাঙালিকে প্রজাতি বিচ্ছিন্নতার (অপরাপর বাঙালি থেকে) ভেতর দিয়ে উন্নত প্রজাতি উদ্ভবের যে মহাসুযোগ সৃষ্টি করেছিল, বাঙালি অবহেলায় তার বেশ ক্ষতি করেছে। এটা বৈজ্ঞানিক সত্য যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভেতর দিয়ে নতুন অভিবাসন মাত্রায় দল থেকে হারিয়ে যায় কিছু অভিযাত্রী। অস্তিত্বের সংগ্রাম চলে নতুন পরিবেশে। ঘনায়মান হয় বিবর্তনকাল। ঘটে প্রাণের বিবর্তন, প্রাণীর বিবর্তন। এভাবেই সশস্ত্র সংগ্রাম একাত্তরে পূর্ববঙ্গের বাঙালিকে রাজনৈতিক জিনগত বিবর্তন ঘটিয়ে যুদ্ধ, রক্ত, দুর্ভিক্ষ, কষ্টসহিষ্ণু, চেতনা উৎকর্ষকারী, কূপম-ূকতা-বর্জিত উচ্চাকাক্সক্ষী উন্নত বাঙালিকে উন্নত প্রজাতির বিবর্তন পথে পা বাড়াতে হয়। বিষয়টি অতিপ্রাকৃতিক, অলৌকিক কোনো ঘটনা নয়, বিজ্ঞান-বস্তুবাদের দ্বান্দ্বিক নিয়মেই ঘটেছে।


ঔপনিবেশিক যুগে কলকাতা নগরে নদীয়া-শান্তিপুরের স্থানীয় মৌখিক ভাষাকে কেন্দ্র করে চলিত বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটে। মৌখিক ও সাহিত্যিক ওই ভাষার উদ্ভব সম্ভব করেছে ঔপনিবেশিক আশ্রয়-প্রশ্রয়। কলকাতা অঞ্চলের আদিভাষা হারিয়ে গেছে। আছে শুধু বাংলা গদ্যের উদ্ভব যুগের রচনায়। কিন্তু, একাত্তর-উত্তর বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকাকে কেন্দ্র করে মৌখিক এবং লেখ্য নতুন ধরনের বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটছে, যা এখনো চলমান। বাংলাদেশের নানা অঞ্চলের মানুষ ভিড় করছে ঢাকায়, নতুন আবাসন গড়ছে, নানা জেলার ভাষার মিশ্রণ ঘটছে, নতুন লেখা আর চলিত বাংলার সৃষ্টিকাল চলছে। এ ভাষা ঔপনিবেশিক আশ্রয়ে গড়া সাহিত্যিক বাংলা নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্রীয়সত্তা, ব্যক্তিসত্তা আর রাজনৈতিক সত্তারই ফসল।


বাংলাদেশের সাহিত্যের ভাষা ও ভাষারীতি কলকাতার গদ্যরীতি থেকে আলাদা। ভাষা বিজ্ঞানের ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, শব্দতত্ত্ব বিচার করলে পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়। ধ্বনি পরিবর্তনের সূত্রগুলোর দিকে তাকালে তা সহজেই ধরা যায়। আঞ্চলিক শব্দের বহুল ব্যবহার ঘটিয়ে অর্থাৎ হাজার বছর সাহিত্যের ভাষায় আঞ্চলিক শব্দকে বর্ণবাদী দৃষ্টিতে ব্রাত্য রাখার প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকরা এগিয়ে যাচ্ছেন। বাংলা গদ্যের প্রতিক্রিয়াশীলতা ভেঙে পড়ছে ঢাকার সাহিত্যে। এ কথার অর্থ এই নয় লেখকরা অকারণে অপভাষা বা অশ্লীল শব্দ আমদানি করবেন। অশ্লীল শব্দে গদ্যরচনা কখনো সাহিত্যের প্রগতিশীলতা, বিপ্লবীপনা বা উদার গণতান্ত্রিকতা নয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও