বিশ্ব নদী দিবস: অভিশাপ থেকে মুক্তি চায় তিস্তাপারের মানুষ
ষোলো-সতেরবার তিস্তার ভাঙনে বাড়িঘর বিলীন হওয়া অনেক মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। দু-চারবার বাড়িভাঙা হাজার হাজার মানুষ তিস্তা পারে গেলেই দেখা যায়। লাখ লাখ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছেন, কখন যে বাড়ি ভেঙে যায়! বন্যার পানিতে ফসলের ক্ষতি হয়নি, তিস্তা পারে এমন ফসলের মালিক পাওয়া যাবে না। পরপর চার-পাঁচবার ফসল ডুবে গেছে, এমন জমির হাজার হাজার কৃষক তিস্তার পারেই আছেন।
তিস্তা ব্যবস্থাপনা না থাকায় বছরে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, এর আর্থিক মূল্য এক লাখ কোটি টাকার কম হবে বলে মনে হয় না। গত বছর কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়নের গতিয়াশামে ভাঙনে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার চেষ্টা করেছিলাম। একটি স্থানেই প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশে ১১৫ কিলোমিটার তিস্তার দুই পারে এমন অনেক স্থানে ভাঙন আছে।
প্রতিবছর পানি আটকে রেখে হঠাৎ ছেড়ে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে বড় বড় বন্যা হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের এই অমানবিক আচরণের কোনো প্রতিবাদও আমরা দেখতে বা শুনতে পাই না। রংপুর অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ তিস্তার ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। তারা অপেক্ষা করে আছে একদিন তিস্তা চুক্তি হবে, তিস্তা নদী সুরক্ষায় কার্যকর পরিচর্যা হবে। নদীপারের ক্ষতিগ্রস্ত এবং আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ নদীর ভাঙন আর বন্যা থেকে মুক্তি চায়।
নদীবিজ্ঞান, নদী প্রযুক্তি, নদী রাজনীতি, ভূরাজনৈতিক বিষয়—এসব বিশেষ কিছুই বোঝেন না নদীপারের সাধারণ মানুষ। তারা চায় তাদের বাড়ি যেন ভেঙে না যায়। ফসল, বাড়িঘর ডুবে না যায়। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। তিস্তাপারের মানুষ বড় আশা করে অপেক্ষা করেছিল, তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু তিস্তা নদী নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোনো কথাই বলেননি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- নদী ভাঙন
- বিশ্ব নদী দিবস