অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে বাংলার বাঘিনীরা। বিশ্ব দরবারে উড়িয়েছে লাল-সবুজের বিজয় নিশান। অসীম বিক্রমে বজায় রেখেছে মাতৃভূমির সম্মান।
বঙ্গবন্ধু তার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নারী ফুটবল দলটি যেন তারই প্রতিনিধিত্ব করেছে। এই দলটি বাংলাদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলাদেশ যে এই বহুত্বকেই লালন করে, এই দলটি যেন তারই এক প্রতিচ্ছবি।
আবার, যে নারীকে পদে পদে হতে হয় নানা বৈষম্যের শিকার, সেই নারীই অদম্য প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে জিতিয়ে এনেছে। এটা আমাদেরকে আবার ভাবতে শেখায় যে নারীকে অবদমিত করে নয়, বরং দ্বার খুলে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলে সেও হতে পারে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
মনে পড়ছে বেশ বছর আগের একটি ঘটনার কথা। একজন নারী ফুটবলারকে বাসের মধ্যে হেনস্থা করা হয়েছিল শুধু হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলার অপরাধে। আবার, এক নারী ফুটবলারের বাবাকে পেটানো হয়েছিল এই অপরাধে যে তার মেয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলে।
প্রশ্ন জাগে, বেগম রোকেয়া যে অবরোধবাসিনীদের মুক্তির কথা বলেছেন এতগুলো বছর আগে, নারীকে সূর্যস্পর্শা হওয়ার অপরাধে আজও বেড়ি পরতে হয় পদে পদে। যে নারীরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছে দেশের জন্য, দেশকে দিয়েছে সম্মান বা পতাকাকে দিয়েছে উচ্চতা—তাদের এই সফলতার পেছনেও যে কত রক্তচক্ষু বা কত অপমানের ইতিহাস জড়িত, তা সহজেই অনুমান করা যায়। যদি সত্যিকার অর্থেই আমরা যে একটা সভ্য সমাজে বসবাস করার কথা নিজেরা স্বীকার করি, তাহলে সেখানে মানুষের পোশাক নির্ধারণ বা স্বাচ্ছন্দ্যময় পোশাক পরার স্বাধীনতা থাকা উচিৎ। অন্যথায়, সেটা স্বাধীনতার নামে অবদমিত করে রাখা হয়।