বিজেপির হিন্দুত্ববাদ ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা
সাহিত্যিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছেন- 'ধর্ম সাধারণ মানুষের কালচার, কালচার সাধারণ মানুষের ধর্ম।' মোতাহের হোসেন চৌধুরীর এ মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, ধর্ম মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে, আচার-আচরণের সঙ্গে সর্বাত্মকভাবে জড়িয়ে আছে। ধর্মে মানুষের বিশ্বাস ঠুনকো কোনো বিষয় নয়। অনেক সময় ব্যক্তি মানুষ ধর্মের কারণে জীবন দিতে পারেন।
ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে মানুষকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী ও অজ্ঞেয়বাদী। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কোনো না কোনো ধর্মে বিশ্বাসী। এ কারণে ধর্মানুভূতিতে আঘাত করলে চরম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সভ্যতার ইতিহাসে ধর্মকেন্দ্রিক সংঘাত বিশাল জায়গা নিয়ে আছে। ইউরোপে দীর্ঘকাল ধরে ধর্মযুদ্ধ হয়েছে। ক্রুসেডে খ্রিষ্টান ও মুসলমান বহু বছর ধরে পরস্পর প্রাণ সংহার করেছে। ধর্মকে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের বিষয় হিসেবে দেখা ইহজাগতিকতাবাদের উৎপত্তি হয়েছিল ইউরোপে। ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যে দীর্ঘকাল চলতে থাকা সংঘাত থেকে জনজীবন রক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়ম করা হলো- চার্চ ও রাষ্ট্র পৃথক থাকবে। রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে চার্চকে এড়িয়ে চলতে হবে। এ সত্ত্বেও চার্চের প্রভাবহীন রাষ্ট্র এখনও পাশ্চাত্যে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ কারণে দেখা যায় ব্রিটেনের রাজা বা রানী 'চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান'। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে বাইবেলে হাত রেখে শপথ নিতে হয়। সে দেশের মুদ্রায় লেখা থাকে- 'ইন গড উই ট্রাস্ট'। রোমান ক্যাথলিক চার্চ নিঃসন্দেহে অতীত দিনের মতো পরাক্রমশালী নন। তা সত্ত্বেও ভ্যাটিকান ও পোপের মর্যাদা বলে দেয়, পোপ খ্রিষ্টজগৎ ও বিশ্বপরিসরে প্রভাবশালী। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে পোপ এখনও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পোপের কিউবা সফর কিউবাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট পরিবর্তন এনেছে।