দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ অর্থায়নের গুরুত্ব
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বৃহৎ একটি অংশ গ্রামে বাস করে। এ জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এখনো দরিদ্র। উন্নয়নশীল একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার সিংহভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য সচেষ্ট। কভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশ তার বিশাল জনগোষ্ঠীকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, বেকারত্ব থেকে মুক্ত করার এবং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এজন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গ্রামীণ অর্থায়নও এমন একটি কর্মসূচি, যা দারিদ্র্য নিরসনে দীর্ঘকাল ধরে ভূমিকা রাখছে।
গ্রামীণ অর্থায়ন বলতে গ্রামীণ এলাকার মানুষকে আর্থসামাজিক কার্যক্রম চালাতে সক্ষম করার জন্য কৃষকসহ গ্রামীণ জনগণকে অর্থ সরবরাহ ও জমা করা এবং তাদের ঋণ দেয়াকে বোঝায়। গ্রামীণ অর্থের উৎসের মধ্যে রয়েছে ছোট এবং বড় আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেগুলো গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ছোট আকারের আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে। সে সঙ্গে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং অন্যান্য ছোট ও মাঝারি গ্রামীণ উদ্যোগকে বড় আকারের আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে।
আনুষ্ঠানিক গ্রামীণ অর্থায়নের উৎসগুলো হলো প্রধানত বিভিন্ন সমবায় সমিতি যা স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণের চাহিদা পূরণ করে; বাণিজ্যিক, সমবায় ও বিশেষায়িত ব্যাংক; ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওচালিত ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম; কৃষি পণ্য বিপণন সমিতি এবং কৃষি উন্নয়নে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সরকারি সংস্থা।
বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক গ্রামীণ আর্থিক বাজারের মধ্যে রয়েছে জাতীয়করণকৃত বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রামীণ শাখা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এজেন্ট ব্যাংকিং, সমবায় ব্যাংক ও সমিতি এবং বিশেষায়িত ব্যাংক যেমন গ্রামীণ ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং আমার বাড়ি আমার খামার কর্মসূচির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং কর্মসূচি।
গ্রামীণ মানুষের জন্য অনানুষ্ঠানিক গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থার উৎসের মধ্যে রয়েছে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, দোকানি, স্থানীয় ডিলার, ব্যবসায়ী, বিপণন মধ্যস্থতাকারী, গ্রাম্য পেশাদার মহাজন; কৃষি মহাজন; কমিশন এজেন্ট; গ্রামীণ পেশাজীবী/স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর বিভিন্ন সমিতি; সচ্ছল গ্রামীণ মানুষ প্রভৃতি। এসব উৎসও গ্রামীণ অর্থের উৎস হিসেবে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।