বঞ্চনা ও বৈষম্যে ভরা চরের জীবন

www.ajkerpatrika.com প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:১৫

১৬টি উপজেলার মোট জনসংখ্যা কাগজে-কলমে ২৪ দশমিক ৫৮ লাখ, হালনাগাদ হিসাব অনুযায়ী যা ৩৫ লাখের কাছাকাছি হবে বলেই মনে করা হয়। আর তাদের গড় মাথাপিছু আয়ও সাক্ষরতার হারের মতোই অতিকরুণ ও মানবেতর পর্যায়ের।


আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে জাহাজডুবির পর সাগরের পানিতে ভাসতে ভাসতে ড্যানিয়েল ডিফোর রবিনসন ক্রুশো শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন জনমানবহীন এক নির্জন দ্বীপে, যেখানে তাকে একাকী কাটাতে হয়েছিল দীর্ঘ ২৮ বছর। এ সময়ে পৃথিবীর মূল জনপদের সঙ্গে তার কোনো ধরনের সংস্রব ও যোগাযোগ কোনোটাই ছিল না। নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার বর্তমান মানুষদের পূর্বসূরিরা কখন কী অবস্থায় গিয়ে ওই নির্জন চরে প্রথম আশ্রয় নিয়েছিলেন, আমরা তা খুব সুনির্দিষ্টভাবে জানি না। তবে এটা জানি যে ড্যানিয়েল ডিফোর মতো একাকী না হলেও দলবদ্ধভাবে তার মতোই বাংলাদেশের মূল জনপদ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তাঁরা সেখানে জীবনযাপন করছেন কয়েক শ বছর ধরে। পার্থক্য একটাই, দীর্ঘ কষ্টভোগের পরে হলেও ডিফো মূল জনপদে ফিরে যেতে পেরেছিল। কিন্তু খালিয়াজুরীর মানুষদের বিচ্ছিন্নতা বছরের পর বছর ধরে প্রায় একইভাবে অব্যাহত আছে। অমিল আরও আছে। শত কষ্টের মধ্যেও ডিফো প্রতিমুহূর্তে মূল জনপদে ফিরে যাওয়ার আশা রাখলেও খালিয়াজুরীর মানুষেরা ওই চরের বিচ্ছিন্নতাকেই জীবনের নিয়তি বলে মেনে নিয়েছেন।


চরের মানুষের অমানবিক জীবন-জীবিকা নিয়ে মাস ছয়েক আগে একটি জাতীয় দৈনিকে মর্মস্পর্শী এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। রাজধানীতে বসে আমরা যখন ক্রমবর্ধমান ও নানামাত্রিক বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি, তখন সেই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার পরিধিতে তাৎক্ষণিকভাবে যাদের গণ্য করি, তাদের মধ্যে খালিয়াজুরীর মতো চরগুলোতে বসবাসকারী মানুষের মুখমণ্ডল কি আদৌ দেখতে পাই? সততার সঙ্গে বললে স্বীকার করতেই হবে যে অধিকাংশ সময় ও ক্ষেত্রে আমরা তা দেখি না। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এই, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশে ক্রমেই তীব্র হয়ে ওঠা বৈষম্যের পরিধিতে এ চরের মানুষেরাই আছে সবার আগে। এরা দেশের প্রান্তিক মানুষের মধ্যেও অধিকতর প্রান্তিক, বঞ্চনার শিকারে পরিণত হওয়া মানুষদের মধ্যেও অধিকতর বঞ্চিত, যাদের সঙ্গে এ দেশের সাঁওতাল ও অন্যান্য কতিপয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষদেরই কেবল তুলনা করা যেতে পারে।


সরকারি প্রজ্ঞাপনে দেশের মোট ১৬টি উপজেলাকে দুর্গম চর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেগুলো হচ্ছে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী; কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম; চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ; কক্সবাজারের কুতুবদিয়া; নোয়াখালীর হাতিয়া; সিরাজগঞ্জের চৌহালী; কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চর রাজীবপুর; পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী; ভোলার মনপুরা; সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, শাল্লা, দোয়ারাবাজার এবং হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ। তবে এ উপজেলাগুলোকে দুর্গম চিহ্নিত করার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু মোটেও সেখানকার জনগণকে দুর্গম বিচ্ছিন্নতার কবল থেকে মুক্ত করা নয়। ওই সব এলাকায় যে রাজকর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করতে যান বা যাবেন, দুর্গমতার কারণে সেখানে তাঁদের যে কষ্ট হবে, সেই কষ্টের কিছুটা হলেও কীভাবে লাঘব বা উপশম করা যায়, সে উপায় খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে। এর মধ্যে একটি উপায় হচ্ছে দুর্গম এলাকায় দায়িত্ব পালনের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা। কিন্তু একই যুক্তিতে দুর্গম এলাকার সাধারণ জনগণের জন্য বিশেষ কী উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বা হবে, সে প্রশ্নের উত্তর মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়, যার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যাবে ওপরের বর্ণনা ও নিচের তথ্য থেকে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও