তিস্তা চুক্তি না হলে কূটনীতিতে কালো ছায়া পড়বে
প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি যখন বাসে করে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন, তখন লাহোর শহরে তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়েছিল। এখনো মনে পড়ে, তখন আমি লাহোরে ভারতীয় মিডিয়া সেন্টারে বসে সারা দিনের বাসযাত্রার সংবাদ পাঠাচ্ছি। সেই সময় ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের এক সাংবাদিক বন্ধু দৌড়াতে দৌড়াতে মিডিয়া সেন্টারে এসে বললেন, বাজপেয়ি লাহোর দুর্গ দেখতে যাচ্ছিলেন তাঁর কনভয় নিয়ে। দুর্গে ঢোকার মুখে তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়েছে, ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই কূটনীতির সময় জামায়াত এবং অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠন—তারা বিবৃতি দিয়ে বলেছে, সীমান্তে এখনো সংঘর্ষ চলছে। সুতরাং কেন নওয়াজ শরিফের সরকার তাঁকে এ দেশে ঢোকার জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে?
স্বভাবতই ভারতীয় সাংবাদিকরা অনেকেই খুব উত্তেজিত। কিভাবে বাজপেয়ির শান্তিপ্রক্রিয়া ব্যাহত হলো, সেই খবর লিখতে অনেকে উদ্যত। অটল বিহারি বাজপেয়ি তাঁর মিডিয়া উপদেষ্টা অশোক ট্যান্ডনকে মিডিয়া সেন্টারে পাঠান আমাদের বোঝানোর জন্য, যাতে আমরা এই নেতিবাচক দিকটি এই মুহূর্তে খুব বেশি হাইলাইট না করি। এর কারণ হলো, এটি ডমেস্টিক রাজনীতির বিষয় নয়। যখন একজন রাষ্ট্রনায়ক শান্তির বাণী নিয়ে এ দেশে এসেছেন, শান্তিপ্রক্রিয়ার জন্য যখন দুই দেশের মধ্যে সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে, তখন সেই চেষ্টা সফল হোক বা ব্যর্থ হোক এবং সেই সদিচ্ছার মধ্যে কতটা রাজনীতি আছে, কতটা সততা আছে—সেসব নিয়ে পরে বিবেচনা হবে। কিছু লোকের রাজপথে নেমে এভাবে বিরোধিতা করা আসলে শান্তিপ্রক্রিয়াকেই বিনষ্ট করার চেষ্টা। এতে কোনো শান্তিকামী রাষ্ট্রেরই স্বার্থ পূরণ হয় না এবং পুরো বিশ্বশান্তিই তাতে ব্যাহত হয়। আমি বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম অটল বিহারি বাজপেয়ির এই সহিষ্ণুতা, বৃহৎ প্রেক্ষাপট বোঝার মানসিকতা এবং অনেক দূর পর্যন্ত দেখার অভিলাষে। ভারতীয় সাংবাদিক হিসেবে সেদিন ওই মৌলবাদীদের বিরোধিতার বিপক্ষে আমি অবস্থান নিয়েছিলাম।
শেখ হাসিনা যখনই ভারতে আসেন বা যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে যান, তখন বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তিরও চেষ্টা থাকে, যাতে শেখ হাসিনার সেই সফরে ভারতের কাছ থেকে তাঁর যে প্রাপ্তি সেটিকে ছোট করে, যে ঘটনায় ভারতবিরোধিতার তাস খেলতে সুবিধা হয় এসব ঘটনা বড় করে তুলে ধরা।