নিত্যপণ্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে- এ কথা সবার জানা। এ পরিস্থিতিতে সীমিত আয়ের পরিবার থেকে আসা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও ভালো থাকার কথা নয়। সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছেন ওই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনেক ক্ষেত্রেই ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে তাঁদের। যাঁদের বাড়ি থেকে টাকা আসে, তাঁদের পরিবারের বাড়তি কিছু দেওয়ার সামর্থ্য নেই। যাঁরা টিউশনি করে চলেন, তাঁদের আয়ও বাড়েনি।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হলে মাত্র ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকতে পারেন; তাও গাদাগাদি করে। বাকিদের থাকতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে গড়ে ওঠা মেসে; যেখানে আবার থাকা-খাওয়ার খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। প্রতিবেদনে যেমনটা বলা হয়েছে, আগে এলাকা ও বাসাভেদে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মেস ভাড়া গুনতে হতো ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। বলা বাহুল্য, এ করুণ অবস্থা শুধু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়; দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তা থেকে মুক্ত- এমনটাও বলা যায় না। কারণ এখানকার শিক্ষার্থীদের একটা অংশ সচ্ছল পরিবার থেকে এলেও, বেশিরভাগই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারভুক্ত। তাঁদেরকে অনেক কষ্টে পড়ার খরচটুকু জোগাড় করতে হয়।
একদিকে থাকা-খাওয়ার অপ্রতুল ও মানহীন ব্যবস্থা, আরেকদিকে ক্রমবর্ধমান আর্থিক টানাপোড়েন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের ওপর কী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা কারও অজানা নয়। অভিজ্ঞতা বলে, এমন পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি হারে ড্রপআউটের শঙ্কা বেড়ে যায়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মূলত নিজেদেরকে ভবিষ্যৎ পেশাগত বা কর্মজীবনের জন্য তৈরি করার চেষ্টা চালান। গোটা জাতির জন্যও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দক্ষতা ও মানের দিক থেকে উঁচু স্তরের কর্মী না পেলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা। এর জের টানতে হয় বছরের পর বছর, এমনকি কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত।