বিড়ালটি যেভাবে বিজ্ঞানী হয়েছিল
কার কার পোষা বিড়াল আছে, হাত তুলুন। এক... দুই... তিন... ও বাবা, সংখ্যাটা দেখছি নেহাত কম নয়! আচ্ছা, এবার বলুন, আপনার পোষা বিড়ালটি কোন কাজের কাজি? সুযোগ পেলেই বেঘোরে ঘুমাতে যে পারে, তা অবশ্য জানি। এটাও জানি, কারও কারও বিড়াল টিভি দেখে, গান শোনে, বৃষ্টি দেখে উদাস হয়। কারওটা হয়তো ইঁদুরও ধরে ফেলে পালোয়ানের মতো। তবে একটা বিড়ালের কথা জানি, যে পদার্থবিজ্ঞানের জটিল গবেষণাপত্র লিখে বিখ্যাত বনে গিয়েছিল! মানে পুরোদস্তুর বিজ্ঞানী যাকে বলে। আমি কিন্তু মোটেও আষাঢ়ে গল্প ফাঁদছি না। বিশ্বাস না হলে পুরো লেখাটা পড়ুন।
সর্বনামের ভুলে
১৯৭৫ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন জ্যাক এইচ হেথারিংটন। পাশাপাশি বেশ কিছু বছর ধরে বিভিন্ন তাপমাত্রায় পরমাণুর আচরণ নিয়ে গবেষণাও চালাচ্ছিলেন। কী, ব্যাপারটা খুব খটমটে হয়ে যাচ্ছে?
আচ্ছা তাহলে আরও সহজ করে বলি, পদার্থবিজ্ঞানের জটিল একটা বিষয় নিয়ে গবেষণা করছিলেন হেথারিংটন।
নিয়ম হলো, গবেষণা সফলভাবে শেষ হলে ফলাফলসহ পুরো বিষয়টা লিখে ফেলতে হয়। একেই বলে গবেষণাপত্র। পরে তা জুতসই কোনো জার্নাল বা সাময়িকীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আরও অনেক বিজ্ঞানী ও গবেষক সেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন। সবকিছু যাচাই–বাছাই করে দেখেন। শেষমেশ সন্তুষ্ট হলে গবেষণাপত্রটি ছাপা হয় ওই জার্নালে। বিজ্ঞানীমহল জানতে পারে নতুন কোনো তত্ত্ব বা তথ্য।
যেটা বলছিলাম, গবেষণা শেষে বেশ খাটাখাটনি করে গবেষণাপত্র লিখে ফেললেন হেথারিংটন। তারপর পাঠিয়ে দিলেন ফিজিক্যাল রিভিউ জার্নালে। সেখানে হেথারিংটনেরই এক সহকর্মীর চোখে বিষয়টা প্রথম নজরে আসে। বিষয় হলো, হেথারিংটন পুরো গবেষণাপত্রই লিখেছেন ‘আমরা’ সর্বনাম ব্যবহার করে। যেখানে লেখার কথা, ‘কাজটা আমি এভাবে করেছি ’, সেখানে তিনি লিখেছেন ‘কাজটা আমরা এভাবে করেছি’। পড়লে মনে হয়, হেথারিংটন একা নন, একাধিক জন মিলে গবেষণাটা করেছেন। কিন্তু গবেষণাপত্রের লেখক হিসেবে আছে শুধু হেথারিংটনের নাম। আর সত্যিই তো, গবেষণা তিনি একাই করেছেন। তাহলে লেখায় ‘আমরা’ এল কী করে?