নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
বর্তমান বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি এক প্রতিবেদনে বলেছে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি গরিব মানুষকে বেশ চাপে ফেলে দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে মানুষের জীবনে নেমে আসতে পারে অনাহার ও পুষ্টিহীনতা। ফলে নানা রকম জটিল ব্যাধির প্রকোপ বাড়তে পারে। এ আশঙ্কা থেকে উত্তরণের জন্য নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করাই রাষ্ট্রের জন্য বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা পূরণ যেমন কঠিন হয়েছে, তেমনি প্রতি বেলায় পেট ভরে ভাত খাওয়াও অনেকে কমিয়ে দিয়েছে। অনেকে ভর্তা ভাত দিয়েই দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে।
জাতিসংঘের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান—খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন সংস্থা (ইফাদ), ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি’ শীর্ষক সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের ৭৩ শতাংশ মানুষের পুষ্টিকর খাবার কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। দেশের মোট জনসংখ্যার ৩২ শতাংশ মানুষ মাঝারি থেকে গুরুতর খাদ্য অনিশ্চয়তায় রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১০ শতাংশ শিশু কৃশকায়। অর্থাৎ এরা তীব্র অপুষ্টির শিকার। পাশাপাশি একই বয়সী ৩০ শতাংশ শিশু খর্বকায় অর্থাৎ বয়সের তুলনায় এদের উচ্চতা কম। অন্যদিকে ২ শতাংশের বেশি শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টির পরিণতি হচ্ছে বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা। প্রতিবেদনে নারীদের পুষ্টি পরিস্থিতির অবনতির কথাও বলা হয়েছে। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এ পরিস্থিতিকে আরো খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে বলে পুষ্টিবিদরা মনে করছেন।
খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষের দৈনন্দিন সুষম খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ দাম বাড়লেও দিনমজুর, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের আয় আগের মতোই আছে। ফলে তাদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটেছে, সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে খাবারেও। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে অনেক পরিবার তাদের দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক কমিয়ে দিয়েছে। অনেক পরিবারে মাছ কিংবা মাংসের জোগান কমে গেছে। ডিম ও দুধের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এগুলোও অনেকের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আগে গরিবের আমিষ বলে পরিচিত একটি ডিম খেলে এখন খেতে হচ্ছে অর্ধেক; যার ফলে খাদ্যপুষ্টিতে বড় পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির পুষ্টি চাহিদা তাঁর দৈনিক পরিশ্রম ও দেহের ওজনের ওপর নির্ভর করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ছয়টি গ্রুপের (শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ, পানি ও চর্বি) খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা প্রয়োজন।