তিস্তার পানিবণ্টন কি শুধু প্রতিশ্রুতিতেই আবদ্ধ!
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ভারত তো করেইনি; বরং চীনের সহায়তায় শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার জীবন রক্ষা প্রকল্পের যে উদ্যোগ বাংলাদেশ নিতে চেয়েছিল, তাতেও ভারত আপত্তি করেছে বলে শোনা গেছে।
প্রায় এক যুগ পর গত ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ৩৮তম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে আবারও ‘সর্বাত্মক চেষ্টার আশ্বাস’ পাওয়া গেছে। এই বৈঠকে সিলেটে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারে একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এই বৈঠকে বাংলাদেশে গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে একটি যৌথ সমীক্ষার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের যে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে, এর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৭টি নদীর পানিবণ্টনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার ও কুশিয়ারা নদীর পানি নিয়েও আলোচনা হয়।
আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, আরও কয়েকটি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন-সংক্রান্ত অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির জন্য নদীর তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে পরে জেআরসির কারিগরি পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হবে। বৈঠকে ত্রিপুরার সাবরুম শহরের সুপেয় পানি সরবরাহের বিষয়টি যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয়, সে জন্য তাগাদা দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের অক্টোবরে ত্রিপুরার সাবরুমে ফেনী নদীর পানি সরবরাহের নিমিত্তে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়, এর তিন বছরের মধ্যেই ফেনী নদীর ইনটেক পয়েন্টের স্থান ও নকশা চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
দীর্ঘ ১২ বছর পর জেআরসির বৈঠক হলো। শেষ বৈঠকটি হয়েছিল ২০১০ সালের মার্চে দিল্লিতে। জেআরসির পরবর্তী বৈঠকগুলো যাতে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর হতে পারে, সে জন্য দুই দেশের প্রতিনিধিরা নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। নীতিগতভাবে সম্মত হলেই-বা কী! অতীতে দেখা গেছে, ভারতের মেজাজ-মর্জির ওপর নির্ভর করে, এসব বৈঠক পূর্বনির্ধারিত সময়ে হবে কি হবে না। ২০১০ সালে দিল্লিতে ৩৭তম বৈঠক হওয়ার পরও সিদ্ধান্ত হয়েছিল, জেআরসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক যেন নিয়মিত হয়। ওই বৈঠকের পর পরবর্তী বৈঠক, অর্থাৎ ৩৮তম বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের ১৮-১৯ জুন ঢাকায়। সে সময় ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় ছিল। তখনো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৈঠকের জন্য তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও বিশেষ কোনো ফল হয়নি।
বৈঠকের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে ভারতের পক্ষ থেকে একতরফা তা বাতিল করা হয়েছিল। বৈঠক বাতিল করার বিশেষ কোনো কারণও তখন বাংলাদেশকে জানানো হয়নি। বাতিল করে দেওয়া ৩৮তম বৈঠক পরের বছর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ভারতের পক্ষ থেকে পুনরায় তা বাতিল করা হয়। ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জেআরসি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই একটি চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়, সে সময় ভারতের সংসদে বাজেট অধিবেশন চলবে, তাই পরে পারস্পরিক সুবিধামতো সময়ে এ বৈঠক করা যাবে। শেষ পর্যন্ত এক যুগ পর ভারত তাদের সেই সুবিধামতো সময় খুঁজে পেয়েছে এবং গত ২৫ আগস্ট মন্ত্রী পর্যায়ের ৩৮তম বৈঠকটি হতে পেরেছে।