ভৌত অবকাঠামো ও সংস্কৃতিতে বিনিয়োগ
পদ্মা সেতুর জন্য আমাদের ভালোবাসা হৃদয়ের গভীরে। হিন্দু পুরাণে পদ্মার সংস্কৃত অর্থ ‘পদ্ম’ ফুল, যা লক্ষ্মীদেবীর আরেক উপনাম। অন্যদিকে পদ্মার অস্থির বিচরণ ও সর্বনাশা ভাঙনের কারণে তার পুরনো নাম কীর্তিনাশা। আমাদের বিশ্বাস এ প্রমত্তা নদীকে পোষ মানিয়ে যে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, তা কীর্তিনাশার দুর্ভাগ্যকে বিসর্জন দিয়ে বয়ে আনবে লক্ষ্মীর আবাহন; খুলে দেবে দেশের অমিত সম্ভাবনার দ্বার।
পদ্মা সেতুর পশ্চাৎভূমিতে অন্যদের মধ্যে পর্যটনশিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটনের সুবিধা হলো এটা একটা শ্রম-ঘন শিল্প; আয়ের সুষম বণ্টনে এ শিল্পের জুড়ি পাওয়া ভার। দেশের ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্যের লাগাম টেনে ধরতে এই শিল্প হতে পারে একটি অন্যতম দাওয়াই। কিন্তু এখনো দেশের মানুষের নানা সামাজিক অভ্যাস এবং বেপরোয়া মানসিকতা ও সংস্কৃতি এ শিল্প বিকাশের অন্যতম অন্তরায়। এ দেশের মানুষ যেমন অতিথি সেবায় আনন্দ পায়, তেমনি আবার তারা উচ্ছৃঙ্খলতা এবং ঠকবাজির আশ্রয় নিয়েও পায় পরমানন্দ। শুধু পর্যটক কেন, কোনো মানুষই যে উচ্ছৃঙ্খলতা ও ঠকবাজি পছন্দ করে না, তার প্রমাণ তো আমাদের জ্ঞানগর্ভ প্রবচন ‘নেড়ে একবারই বেলতলায় যায়।’ কেউ কোনো দেশ বা অঞ্চলের মানুষের ভালো ও বিনয়ী আচরণের কথা যদি একজনের কাছে বলে, তো প্রতারিত ও নির্যাতিত হওয়ার কথা বলে দশজনের কাছে। ফলে বেলতলা বিরান ভূমিতে পরিণত হয়।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূল পরিবর্তন না আনতে পারলে শুধু ইট ও কংক্রিট দিয়ে অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়ে তা ফলপ্রসূ ও টেকসই করা যাবে না। অথচ এ অবস্থার যে অনুকূল পরিবর্তন আনা সম্ভব তার প্রমাণ দেশেই রয়েছে; চাঁপাইনবাবগঞ্জে গাছ থেকে আম হাতের নাগালে দোল খায়, অথচ কেউ সেটা ছিঁড়ে পকেটে ভরে না। উন্নয়নকে ত্বরান্বিত ও টেকসই করতে শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের মূল্যবোধ, মনস্তত্ত্ব, দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে কর্মসূচি প্রবর্তন করা জরুরি।