৫০ বছর পর অস্কার ক্ষমা চাইল কেন
দ্য গডফাদার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য অস্কার জেতেন অভিনেতা মারলন ব্র্যান্ডো। কিন্তু তিনি পুরস্কারটি গ্রহণ করেননি। কারণ হলিউডে ন্যাটিভ আমেরিকানদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন ও তাদের ওপর মার্কিন সরকারের জুলুম। অস্কার অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে সাশিন লিটলফেদারকে ব্র্যান্ডো পাঠান তার হয়ে পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করতে। সেদিন অনুষ্ঠানে লিটলফেদারকে এমন কিছু অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় যার জন্য তার কাছে ক্ষমা চায় অস্কার। কী হয়েছিল সেদিন লিটলফেদারের সঙ্গে? লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
দ্য গডফাদার
আমেরিকান লেখক মারিও পুজোর দ্য গডফাদার বিশ্বে ব্যাপক সাড়া জাগানো এক উপন্যাস। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত এই বই এক মাফিয়া পরিবার নিয়ে লেখা। প্রকাশের তিন বছর পর ১৯৭২ সালে বেস্ট সেলিং এই বই নিয়ে একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। এটির পরিচালক ছিলেন ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা। চিত্রনাট্যে ছিলেন দ্য গডফাদারের লেখক মারিও পুজো ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কপোলা। উপন্যাসের মাফিয়া ডন ভিটো করলিওনি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সবচেয়ে মেধাবী অভিনেতা মারলন ব্র্যান্ডো। পুজোর উপন্যাসের মতো দ্য গডফাদার সিনেমাটিও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। ৪৫তম অস্কারে দ্য গডফাদার সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়। এ ছাড়া অনবদ্য অভিনয়ের জন্য ব্র্যান্ডো ও অসাধারণ চিত্রনাট্যের জন্য পুজো ও কপোলা অস্কার জেতেন। ৪৫তম অস্কার অনুষ্ঠান চলচ্চিত্র নির্মাতা কপোলার জীবনে নিঃসন্দেহে স্মরণীয় দিন ছিল। দিনটি অবশ্য কেবল কপোলার জন্যই নয়, অস্কার কর্র্তৃপক্ষের জন্যও স্মরণীয় ছিল। সেদিন অনুষ্ঠানে এমন কিছু ঘটেছিল, যা অস্কারের ইতিহাসে কখনো ঘটেনি। দ্য গডফাদারের জন্য সেরা অভিনয়ের মনোনয়ন পাওয়া মারলন ব্র্যান্ডো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এটাই ছিল স্বাভাবিক, কিন্তু সেদিন এমনটা হয়নি। সেরা অভিনেতা হিসেবে ব্র্যান্ডোর নাম ঘোষণা করা হলে মঞ্চের দিকে অগ্রসর হন সাশিন লিটলফেদার নামের এক তরুণী। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রজার মুর দর্শকদের জানান, ব্র্যান্ডোর হয়ে অস্কার পুরস্কার গ্রহণ করবেন এই তরুণী। লিটলফেদারকে ব্র্যান্ডোর পুরস্কারটি দেওয়া হলে তিনি সেটি নিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে একটু অবাক হন উপস্থাপক। এরপর সেই তরুণী দর্শকদের উদ্দেশে যেসব কথা বলেন, তা অস্কারের মতো অত্যন্ত সম্মানজনক অনুষ্ঠানে ওই প্রথম এবং ওই শেষ। লিটলফেদার দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘মারলন ব্র্যান্ডো আমাকে আপনাদের বলতে বলেছেন, সেরা অভিনয়ের পুরস্কার তিনি গ্রহণ করবেন না। কেন এই সিদ্ধান্ত, তা ব্র্যান্ডো বিস্তারিত এক কাগজে লিখে পাঠিয়েছেন। তবে সময়ের অভাবে আমার পক্ষে ব্র্যান্ডোর বক্তব্য পড়ে শোনানো সম্ভব হচ্ছে না। পরে এটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হবে।’ লিটলফেদার সর্বসাকুল্যে ৬০ সেকেন্ডের মতো বক্তব্য রাখেন। তার সেদিনকার আইকনিক বক্তব্যে অভিযোগ ছিল। সেসব বলার সময় তিনি একটু থামলে দর্শক সারি থেকে দুয়ো ধ্বনি ভেসে আসে। একই সঙ্গে করতালিও শোনা যায়। সেদিন অনুষ্ঠানে লিটলফেদার যেসব অভিযোগ করেছিলেন, তার জন্য তার কাছে সম্প্রতি ক্ষমা চেয়েছে অস্কার। অনুষ্ঠানে লিটলফেদার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন প্রায় ৫০ বছর আগে। এতদিন পর লিটলফেদারের অভিযোগের ভিত্তিতে অস্কারের ক্ষমা চাওয়া নিয়ে সংগত কারণেই আলোচনা উঠেছে। এ ছাড়া অস্কার অনুষ্ঠানে ও পরবর্তী সময়ে লিটলফেদারের সঙ্গে হওয়া অসৌজন্যমূলক ও অন্যায় আচরণের জন্যও ক্ষমা চাইতে দেখা গেছে অস্কারকে। ৫০ বছর আগের ঘটনা যারা জানতেন না, তারা প্রশ্ন তুলেছেন কে এই সাশিন লিটলফেদার। তিনি অনুষ্ঠানে এমন কী বলেছিলেন যে, যার জন্য ৫০ বছর পরে হলেও ক্ষমা চাইল অস্কার?
- ট্যাগ:
- জটিল
- অস্কার
- ক্ষমা চাওয়া