বিশ্বরাজনীতিতে এককেন্দ্রিকতা কাম্য নয়

কালের কণ্ঠ গাজীউল হাসান খান প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০২২, ১১:২৮

জর্জ অরওয়েল, আসল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার, ১৯০৩ সালে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরে তাঁর পরিবার ইংল্যান্ডে ফিরে এলে জর্জ পড়াশোনার জন্য এটনে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথমে তিনি ব্রিটিশ হোম গার্ড এবং পরে বিবিসির জন্য কাজ করেছেন। ১৯৪৫ সালে তাঁর রাজনৈতিক রূপকধর্মী উপন্যাস, ‘এনিম্যাল ফার্ম’ এবং ১৯৪৯-এ ‘নাইনটিন এইটিফোর’ প্রকাশিত হলে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন।


জর্জ অরওয়েল ১৯৫০ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর অন্য অনেক রচনার মধ্যে ‘নাইনটিন এইটিফোর’ বিশ্বখ্যাতি অর্জন করার পেছনে ছিল রাজনীতিগতভাবে এক অবদমিত একনায়কতন্ত্র ও মহাপরাশক্তির উত্থানের কথা। ১৯৪৯-এ প্রকাশিত ‘নাইনটিন এইটিফোর’ ছিল জর্জ অরওয়েলের শেষ গ্রন্থ। যদিও সে গ্রন্থে রুশ বিপ্লবের ক্লেদাক্ত পরিণতি তুলে ধরা জর্জ অরওয়েলের মূল উদ্দেশ্য ছিল, তবু তিনি সেখানে থেমে থাকেননি। সমাজতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র কিংবা গণতন্ত্রের নামে আধিপত্যবাদ এবং পক্ষান্তরে গণবিরোধী স্বৈরাচারের চিত্র তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের অন্তরালে বিশ্বকে বিভক্ত করার তৎকালীন বহু অপপ্রয়াসকেও অরওয়েল স্থান দিয়েছেন তাঁর লেখায়। বিংশ শতাব্দীর পথপরিক্রমায় ১৯৫২-৫৩ সালে সংঘটিত এবং স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত কোরীয় যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক তাঁর জীবদ্দশায়ই বিশ্বকে তথাকথিত আদর্শের ভিত্তিতে দুই শিবিরে বিভক্ত করার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। অরওয়েলের রচনা বামপন্থীদের নয়, বামের চূড়ান্ত বামধারাকে নিয়েও বিন্যস্ত হয়েছে। এমনকি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত মুক্ত সমাজে ‘ম্যাকার্থি যুগের’ গণবিরোধী ভূমিকা এবং সাম্যবাদবিরোধী বাড়াবাড়িকেও তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। সে কারণে তিনি স্পেনের শাসক ফ্রাংকো এবং তাঁর নািস সমর্থক ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে ১৯৩৭ সালে মাদ্রিদে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন।


জর্জ অরওয়েল একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ এবং এমনকি গণতান্ত্রিক বিশ্বে বিরাজিত আধিপত্যবাদ ও পুঁজিবাদী শাসন-শোষণের বিরুদ্ধেও কলম ধরেছেন। অরওয়েল স্পষ্টতই গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। তিনি তাঁর রচিত ‘এনিম্যাল ফার্ম’-এ নেপোলিয়ন ও স্নোবলের চরিত্র কিংবা ‘নাইনটিন এইটিফোর’-এ স্তালিন ও ট্রটস্কির যে সামাজিক দ্বন্দ্ব ও আদর্শিক সংঘাতগুলো তুলে ধরেছেন, মূলত সেগুলোই মানবসমাজকে সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত করেছে। স্তালিনের সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রের ধারণা এবং একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসনের যে চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন, তাতে তিনি তাঁর নিজস্ব পরিসরে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে সেখানে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার কিংবা অর্থনৈতিক মুক্তি সন্তোষজনকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ‘নাইনটিন এইটিফোর’-এর দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে  গোঁফওয়ালা যে ‘বিগ ব্রাদার’ বা বড় কর্তার অবয়ব অরওয়েল চিত্রিত করেছেন, তাঁকে পাঠকরা তাৎক্ষণিকভাবেই স্তালিনের প্রতিচ্ছবি বলে ধরে নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকার্থি যুগে যখন বিশ্বব্যাপী একটি ভীতি হিসেবে সাম্যবাদের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে প্রচার-প্রপাগান্ডা চলছিল, তখন অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইটিফোর’ সংক্রামক ব্যাধির মতো আমেরিকা ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু অরওয়েলের বক্তব্য এবং মন-মানসিকতা ছিল ভিন্নতর। তিনি একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন কিংবা তাকে ঠেকাতে গিয়ে গণতন্ত্রের নামে আধিপত্যবাদ কিংবা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। সে কারণেই তিনি ইউরোপে নািসবাদ কিংবা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে স্পেনে সংগ্রাম করেছেন। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রশ্নে তিনি যেমন আদর্শ হিসেবে সমাজতন্ত্রকে অপাঙক্তেয় মনে করেননি, তেমনি মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা কিংবা অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে গণতন্ত্রকে স্বৈরাচার কিংবা আধিপত্যবাদীদের হাত থেকে মুক্ত রাখতে সোচ্চার হয়েছিলেন। চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতার সর্বোত্তম সমন্বয় ঘটাতে। কিন্তু যে যেভাবেই চেয়েছে, সেভাবেই অরওয়েলকে ব্যবহার করার প্রয়াস পেয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও