আম খেলে কেন পায় ঘুম!
ভরা আমের মৌসুম প্রায় শেষ হয়েছে সদ্য। ফলের রাজা আম বাঙালির রসনায় এক বিশেষ জায়গা দখল করে রয়েছে। শুধু এমনি এমনি ফল খাওয়া নয়, কাঁচা আম হতে পাকা আম নিয়ে বঙ্গ ভাণ্ডারে পদের অন্ত নেই। আর আম পাকা হলে তো তার কথাই আলাদা। সকাল বিকাল যে তার সাথে হাপুস হুপুস গাপুস গুপুস হয়নি এমন আম প্রেমী খুঁজে পাওয়া ভারী দায়।
আম খেতে দোষ নেই। আমের আছে এত্তো এত্তো পুষ্টিগুণ!
আমে থাকা বিটা কেরোটিন চোখের জ্যোতি বাড়ায়, ত্বককে উজ্জ্বল করে। ভিটামিন সি রাখে সর্দি, কাশি ও জ্বর থেকে দূরে। পাকা আমে ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম পরিমাণে পর্যাপ্ত থাকায় হৃদপিন্ডের রোগগুলি কম হয়। এছাড়া আমের পটাশিয়াম হৃদ স্পন্দন নিয়ন্ত্রনে রাখে।
আম ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস, তাই হাড়েও বেশ জোর দেয়। আমে উৎসেচকের ছড়াছড়ি আর আমের আঁশের ভিটামিন, মিনারেলস ও এন্টি-অক্সিডেন্ট হজমি শক্তি বাড়ায়। এছাড়াও এগুলি কোলন ক্যানসার প্রতিরোধী। এর ২৫ রকমের কেরাটিনোইডস উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরের ইমিউন ব্যবস্থাকে সবল রাখে।
কিন্তু ভারী মুশকিলের কথা হলো বেশি ভালো কিন্তু ভালো না আবার। সবটাই একটু রোষে বসে খেতে হয়। আর এই কথাটি আমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিস রোগীদের। না হলে রক্তের চিনির মাত্রা একটু উপরে উঠতে উঁকি দেবে।
আমের সাথে আছে শৈশবস্মৃতি। শিঙ্গা করে অনেকেই চুকচুক করে আম খেয়েছে ছোটবেলায়। বুড়োদের কাছে শুনতে হতো আম খেলে পাবে ঘুম।
সত্যি সত্যিই কিন্তু পাকা আমের মধুর রসে চোখটি ঢুলুঢুলু হয়ে আসে। পড়ে যেতে হয় একটু তন্দ্রার ঘোরে। চোখ দুটো লেগে আসে, বলে শুতে চলো। কিন্তু দিনের বেলায় কাজের বা পড়ার মাঝে সেটি হচ্ছে কই?
এখন নিশ্চয়ই কৌতূহল জাগছে এই আম ঘুম পাড়াচ্ছেটা কি করে?
আমের সেই নিদ্রাকর্ষক উপাদানটি হলো ট্রিপ্টোফ্যান যা আদতে এক ধরনের এমিনো এসিড। আম খেলে শরীরে অনেকখানি কার্বোহাইড্রেট প্রবেশ করে, ফলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজের পরিমাণ। একে সামাল দিতেই আগমন ঘটে ইনসুলিনের। বাড়তি ইনসুলিন মস্তিষ্কে ট্রিপ্টোফ্যানের দিশা নির্দেশ করে। ট্রিপ্টোফ্যান হতে যেসকল নিউরোট্রান্সমিটার বিকাশ লাভ করে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সেরোটোনিন। ইনিই সেই যে মস্তিষ্ককে দেয় ঘুমের চিঠি।
এই সেরোটোনিন নিঃসৃত হয়েই আমাদের গুরুমস্তিষ্ককে অনেকখানি শীতলতা প্রদান করে প্রশান্তি ভাব আনে। শরীর তখন আরাম বোধ করে। ঘুম ভাবে এই তো আসার মোক্ষম সময়!
এছাড়াও আমে থাকা ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন বি-১২, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম খুব ঘুম সহায়ককারী উপাদান।
ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম স্নায়ুবিক উত্তেজনা কমায় আর পেশীকে শিথিল করে। ভিটামিন বি-৬ মেলাটোনিনকে বাড়িয়ে দেয়। মেলাটোনিন এমন একটি প্রাণরসায়ন যা সারকার্ডিয়ান রিদম বা জৈবিক ছন্দকে সচল রেখে ঘুম চক্রের খেয়াল রাখে। ভিটামিন বি-৬ এর পাশাপাশি ভিটামিন বি-১২ এই ঘুম-জাগরণ চক্র হয় নিয়ন্ত্রণ করে। আর এই শারীরবৃত্তীয় অবস্থাগুলি আম পেটে পড়ার সাথে সাথে একসঙ্গে ঘুমকে ইন্ধন যোগায়।