অ্যালো ভেরার ৭টি ভিন্ন ব্যবহার
শুধু ত্বকের যত্নেই নয় অ্যালো ভেরার জেল ব্যবহার করে চুল পরিচর্যার পাশাপাশি মেইকআপ তোলার জন্যও ব্যবহার করা যায়।
ত্বক রোদে পুড়লে অ্যালো ভেরার রস বা জেল মাখা উপকারী। তবে এতে এমনসব প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা ত্বক থেকে শুরু করে চুলের জন্যও উপকারী।
চুলের দৈর্ঘ্য বাড়াতে
নিউ ইয়র্কের ‘বোর্ড সার্টিফায়েড’ চর্মরোগ-বিশেষজ্ঞ মোনা গোহারা বলেন, “চুল যদি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায় তবে দারুণ একটি সমাধান হল অ্যালো ভেরা। এতে থাকা প্রোটিন, খনিজ উপাদান, অ্যামিনো অ্যাসিড কন্ডিশনার হিসেবে চমৎকার।
রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “আর অ্যালো ভেরা চুলে মাখিয়ে রাখলে মাথার ত্বকের প্রদাহ ও চুল পড়া কমে। চুলে রং করার পর এর ক্ষয় পূরণ করতে দুয়েক দিন পর অ্যালো ভেরা মাখা উচিত।”
তবে মনে রাখতে হবে, অ্যালো ভেরা যেহেতু আঠাল, তা ব্যবহারের পর মাথা খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
ক্ষতস্থান সারাতে
মায়ামি’র ‘রিভারচেজ ডার্মাটোলজি’র নিবন্ধিত ত্বক-বিশেষজ্ঞ অ্যানি গঞ্জালেস বলেন, “প্রচণ্ড রোদেপোড়া ত্বকে অ্যালো ভেরা ব্যবহার করতে বলার যথাপোযুক্ত কারণ আছে অনেকগুলোই। এটা প্রদাহ সারায়, ত্বক শীতল করে, ত্বকে আর্দ্রতা যোগায় এবং তা ধরে রাখতে সাহায্য করে।”
নিউ ইয়র্কের ‘শোয়াইগার ডার্মাটোলজি গ্রুপ’য়ের আরেক ত্বক-বিশেষজ্ঞ র্যাচেল নাজারিয়ান বলেণ, “ক্ষতস্থান সারাতেও এটি কার্যকর। পোড়া, পোকার কামড়, কাটাছেড়া, র্যাশ সব ধরনের ক্ষতেই অ্যালো ভেরা প্রয়োগ করে উপকার পাওয়া যাবে। শরীরে ‘থ্রম্বোক্সিন’ নামক একটি রাসায়নিক উপাদানের নিঃসরণ কমায় অ্যালো ভেরা। আর এই উপাদান ক্ষতস্থানে সেরে ওঠার প্রক্রিয়াকে ধীরগতির করে তোলে।”
দাগের চিকিৎসা
গঞ্জালেস বলেন, “অ্যালো ভেরার প্রাকৃতিক ‘অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল’ গুণাগুণ ত্বকের কোনো ক্ষতি না করেই ব্রণ সারিয়ে তোলে। এখানেই শেষ নয়, ‘স্যালিসাইলিক অ্যাসিড’য়ের প্রাকৃতিক উৎস এই অ্যালো ভেরা, যা লোপকূপ থেকে বাড়তি তেল অপসারণ করে তা উন্মুক্ত করে।”
প্রায় সকল ব্রণ সারানো প্রসাধনীতেই অ্যালো ভেরার নির্যাস থাকে। ফুলে ওঠা যন্ত্রণাদায়ক ব্রণ সারিয়ে তুলতেও উপকারী অ্যালো ভেরা। আর এভাবেই ব্রণে থেকে হওয়া দাগও পড়বে না।
স্ক্রাব
গঞ্জালেস বলেন, “প্রাকৃতিক এই ‘ময়েশ্চারাইজিং’ উপাদান পুরো শরীরে ‘এক্সফোলিয়েন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করা যায় নিশ্চিন্তে।”
দুই চা-চামচ অ্যালো ভেরার সঙ্গে এক চা-চামচ বেইকিং সোডা মিশিয়ে তা ত্বকে ১০ মিনিট মাখিয়ে রাখুন। ত্বকের মরাকোষ তুলে আনতে চাইলে সঙ্গে যোগ করতে পারেন চিনি।
আর অ্যালো ভেরার স্যালিসাইলিক অ্যাসিড’ কাজ করবে ‘এক্সফোলিয়েন্ট’ হিসেবে।
ত্বক থেকে বয়সের ছাপ কমাতে
ডা. নাজারিয়ান বলেন, “অ্যালো ভেরা ‘ফাইব্রোব্লাস্টস’ নামক একটি উপাদান বাড়ায় শরীরে। এই উপাদান ‘কোলাজেন’ নামক আরেকটি উপাদান তৈরি করে। এই কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করার জন্যই মুলত ত্বকের ক্ষতস্থান সারাতে অ্যালো ভেরা এত বেশি কার্যকর।”
ভিটামিন ই এবং সি’র চমৎকার উৎস অ্যালো ভেরা। দুটোই শক্তিশালী ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’। আর ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক।
সব ধরনের ত্বকেই সহ্য হয় অ্যালো ভেরা, ‘অ্যালার্জি’ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও কম। এমনকি একজিমা, সিরোসিস’য়ের মতো রোগেও অ্যালো ভেরা মাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অ্যালো ভেরার নির্যাস মিশ্রিত প্রসাধনীর তুলনায় সরাসরি অ্যালো ভেরা ত্বকে প্রয়োগ করা সবসময়ই প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত।
মেই্কআপ তুলতে
গতকালের দেওয়া মাসকালা আজও ওঠেনি? অসুবিধা নেই, ওই জায়গায় অ্যালো ভেরার জেল মেখে রেখে কিছুক্ষণ পর আলতো করে ঘষে তুলে ফেরতে পারবেন।
ত্বকে লেগে থাকা যে কোনো ধরনের মেইকআপ কিংবা প্রসাধনী পরিষ্কার করতে অ্যালো ভেরা এভাবে ব্যবহার করা যায়। যা অত্যন্ত কার্যকর ও উপকারী। আর মেইকআপ তোলার পাশাপাশি ত্বককেও আর্দ্র করবে।
প্রাকৃতিক ভ্রু’র জেল
ভ্রু সামলে রাখতে জেল হিসেবে অ্যালো ভেরা মাখা যায়। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে পরিষ্কার মাসকারার ব্রাশ। এতে ভ্রু’র লোম শক্ত হয়ে আটকে থাকবে না আবার এলোমেলো হওয়ার সুযোগও পাবে না।
পাশাপাশি ওই অংশে কোনো শুষ্কতাও দেখা দেবে না।
- ট্যাগ:
- লাইফ
- ত্বকের যত্ন
- অ্যালোভেরা
- চুলের যত্ন