আরব রাজনীতির গতিপথ ঠিক করছেন এমবিজেড, এমবিএস নয়
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নামমাত্র এক নেতার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সমবেদনা জানানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু পাঠিয়েছিলেন। তাঁর মন্ত্রিসভায় শীর্ষ পর্যায়ের একটি দল—ভাইস প্রেসিডেন্ট, সিআইএ পরিচালক, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী আমিরাত সফরে এবং দেশটির নতুন শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সঙ্গে হাত মেলাতে যান। তিনি এমবিজেড (মোহাম্মদ বিন জায়েদ) হিসেবেও পরিচিত। টাইম সাময়িকীর মতে, কিছু সময় ধরে তাঁকে বলা হচ্ছে আরব বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা। সম্ভবত তিনি তা-ই হতে চলেছেন।
আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান (৭৩) গত ১৩ মে মারা যান। তিনি ২০১৪ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর থেকে তাঁকে আর জনসমক্ষে তেমন দেখা যায়নি।
শেখ খলিফার অসুস্থতার পর থেকে তাঁর সৎভাই যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি ক্ষুদ্র এই আরব দেশটিকে বিশ্বরাজনীতির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়ে যান। শেখ খলিফার মৃত্যুর পরদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে আমিরাতের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৬১ বছর বয়সী শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ দায়িত্ব নেন।
ঐতিহ্যবাহী শক্তিগুলো পিছু হটায় এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের কিছুটা গুটিয়ে নেওয়ায় বদলে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্যে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র এমবিজেড। তিনি ইসরায়েলে সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। ইয়েমেনে ইরান–সমর্থিত হুতি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দেন। কাবুল থেকে তিউনিস নিজের রাজনৈতিক প্রভাববলয়ে এনেছেন তিনি। ব্রাসেলস ও লন্ডন থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত।
বেদুইন বাবার পাইলট ছেলে
জীবনযাপনের ধরনে আধা বেদুইন ছিলেন শেখ মোহাম্মদের বাবা জায়েদ। তবে ছেলেদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে তিনি ছিলেন নিবেদিত। শেখ মোহাম্মদ যুক্তরাজ্যের স্যান্ডহার্স্টে ব্রিটিশ সামরিক একাডেমি থেকে ১৮ বছর বয়সে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি ব্রিটিশ প্রশিক্ষিত হেলিকপ্টার পাইলট; কড়া মনোভাবের একজন মানুষ।
শেখ মোহাম্মদের বয়স যখন ১৪ বছর, তাঁকে মরক্কোর একটি স্কুলে পাঠিয়েছিলেন বাবা জায়েদ। উদ্দেশ্য ছিল জীবনের কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে যাতে আতিথেয়তা না পান, সে জন্য পাসপোর্টে নামের শেষ অংশ বদলে দেওয়া হয়েছিল। মরক্কোয় অন্য সাধারণ একজন মানুষের মতো জীবন যাপন করেন এই যুবরাজ। নিজে রান্না করেই খেতেন। নিজের জামাকাপড় ধোয়ার কাজটাও নিজেই করতেন।
সামরিক কর্মকর্তা এমবিজেড আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা জায়েদের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী এবং যোগ্য সন্তান। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমানে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বিশ্লেষক ব্রুস রিডেল বলেন, ‘তিনি ছিলেন স্বভাবজাত নেতৃত্বগুণের অধিকারী, উদ্যমী। তিনি দেশটির নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে কাছে টানার এবং নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করার একটা রাস্তা বের করে।’
- ট্যাগ:
- আন্তর্জাতিক
- নীতি নির্ধারক
- বিশ্বরাজনীতি