সবার ওপরে চাই সংঘবদ্ধতা

www.ajkerpatrika.com প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২২, ২১:৪৬

আমরা সবাই বলি, বলে বলে ক্লান্ত ও হতাশ হই, গ্লানিতে পায়; কর্তাব্যক্তিরা অন্তঃসারশূন্য সব কথা বলতে থাকেন। আমরা শুনি, আমাদের ক্ষোভ বাড়ে। উথলে ওঠে বিদ্রোহ। দুর্ভোগ বাড়তেই থাকে; খাদ্যপণ্যের, জ্বালানির মূল্য, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। বাজারব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। অপরদিকে শ্রমিকের মজুরি, বিশেষ করে চা-শ্রমিকের মজুরির সংবাদ জেনে মাথা ঘুরে যাওয়ার দশা। নতুন বর্ধিত মজুরি মাত্র ১৪৫ টাকা সরকার ও মালিকপক্ষ নির্ধারণ করেছে, ভাবা যায়! এর উপসংহারটা কোথায়, কোন সিদ্ধান্তে গিয়ে আমরা পৌঁছাব? বস্তুত ওই সিদ্ধান্তটাই হলো প্রধান, নইলে আমাদের কথা কর্তাদের কথার চেয়েও মূল্যহীন হয়েই থাকবে।


সিদ্ধান্তটা কিন্তু খুবই সরল। সেটা এই যে ব্যবস্থাটাকে বদলাতে হবে, নইলে আমাদের মুক্তি নেই। বুঝতে হবে যে ব্যবস্থাটা পুঁজিবাদী। অপরাধ ব্যক্তিই করছে, তাকেই দেখা যাচ্ছে সামনে, কিন্তু মূল অপরাধী হচ্ছে ব্যবস্থাটা। সে-ই আসল অপরাধকারী। সে লুকিয়ে থাকে। এই অপরাধীকে চিহ্নিত করা দরকার। এবং তাকে বিদায় করা চাই।


আজকের পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
সংশোধনে কুলাবে না, সংস্কার তো সংরক্ষণেরই পদক্ষেপ। উদারনীতিকেরা সংস্কার, সংশোধন ইত্যাদি চিকিৎসার কথা ভাবেন, ব্যবস্থাপত্র দেন, কিন্তু তাতে অপরাধীর স্বভাব-চরিত্রে ও অপরাধলিপ্সায় যে কোনো পরিবর্তন আসছে, তা মোটেই না। এখন তো দেখা যাচ্ছে ব্যবস্থাটা আরও বেশি মরিয়া ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, মরণকামড় বসাচ্ছে, পৃথিবীর সর্বত্র নিকৃষ্টমানের মানুষেরা সর্বাধিক ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে, তারা সবকিছু তছনছ করে দেওয়ার ব্রত নিয়েছে। পৃথিবী নামের এই গ্রহটিতে মানুষ আর টিকে থাকতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।


ইতিমধ্যে বিশ্বের অন্যত্র যেমন, তেমনি বাংলাদেশে দেখছি আমরা যে পুঁজিবাদীরা নিজেদের ‘আলোকিত স্বার্থ’ রক্ষা করবে, তার ব্যবস্থাটাও অক্ষুণ্ন রাখতে পারছে না। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় যে সংসদীয় নির্বাচনব্যবস্থা, সেটাও ভেঙে পড়েছে; অর্থাৎ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এক পায়ের ওপর ভরসা করে দাঁড়ানোর জন্য সে ব্যর্থ কসরত করছে। তা নির্বাচনব্যবস্থা না থাকলে কী ঘটতে পারে? হয়তো নৈরাজ্য আসবে। হয়তো অভ্যুত্থান ঘটবে। বামপন্থীরা এমন শক্তিশালী অবস্থানে নেই যে তারা অভ্যুত্থান করবে, অভ্যুত্থান করলে করবে রক্ষণশীলেরা। তেমন ঘটনা নিশ্চয়ই মঙ্গলজনক হবে না।


পুঁজিবাদ ব্যক্তিস্বার্থকে প্রধান করে তোলে, স্বার্থবোধের গোপন জায়গাটাতে নীরবে ঘা দিয়ে ব্যক্তির ভেতরের মুনাফালিপ্সাটাকে জাগিয়ে তোলে। সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী ‘সাহিত্যে চাবুক’ নামের একটি প্রবন্ধে বলেছেন যে বাংলা ভাষায় ‘মি’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দগুলো খুবই নোংরা; ভণ্ডামি, ইতরামি, বাঁদরামি, গুন্ডামি, নোংরামি, ভাঁড়ামি—সবকিছুতেই ওই ‘মি’ হাজির; তবে মানুষের জন্য সবচেয়ে সর্বনেশে হচ্ছে ‘আমি’; কারণ ওই পদার্থটির আধিক্য ঘটলে বিদ্যাবুদ্ধি-কাণ্ডজ্ঞান সবকিছু লোপ পায়। এখন সর্বত্রই কিন্তু ওই ‘আমি’র তাণ্ডব। মধ্যযুগের কবি যে গেয়েছেন গান, ‘আপন আপন করে তুই হারালি তোর যা ছিল আপন’, সেটা এখন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় জাজ্বল্যমান রূপে সত্য। আমার ‘আমি’ এখন আমরা হতে চায় না; আর হয় যদি তবে ‘তোমাদের’ সঙ্গে যুদ্ধ বাধায়। বোধ ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ বলবেন আজ প্রয়োজন সর্বজনীন ‘আমরা’ হওয়া। বলবেন, তার জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি আবশ্যক। আসলে সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিও যথেষ্ট নয়, দরকার হবে রাজনৈতিক কাজ, সেই কাজের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের পুঁজিপন্থী ভূমিকার অবসান ঘটল। সমাজ-পরিবর্তন ছাড়া সেটা কিছুতেই সম্ভব নয়।


পরিবর্তনের জন্য অত্যাবশ্যক সাংস্কৃতিক কাজটি বাংলাদেশে আমরা করছি কি? না, করছি না। যেমন ধরা যাক, পাঠাগার। পাঠাগারে গিয়ে তো মানুষ একত্র হতে পারে। বইকে কেন্দ্র করে মেলামেশা সম্ভব। কিন্তু মানুষ তো এখন আর বই পড়ায় আগ্রহী নয়, পড়লেও পাঠাগারে যায় না; ইন্টারনেট, ওয়েবসাইটে টেপাটেপি করে ঘরে বসে যান্ত্রিক বই সংগ্রহ করে নিয়ে কোনায় বসে বসে পড়ে। পাঠাগার কেবল বই সংগ্রহের জায়গা হলে সেখানে লোক পাওয়া কঠিন হবে; হচ্ছেও। পাঠাগারকে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। পাঠাগার হবে সামাজিকভাবে মিলবার একটি জায়গা, যেখানে মানুষ কেবল বই পড়ার জন্য যাবে না, নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আকর্ষণেও যাবে। পাঠাগার হওয়া চাই একটি আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে বই নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি নাটক, গান, আবৃত্তি, বিভিন্ন দিবস উদ্‌যাপন, আলোচনা, বক্তৃতা, খেলাধুলা, শরীরচর্চা প্রতিযোগিতা, অনেক কিছুর আয়োজন করা সম্ভব। সেটা করা গেলে বিকেল হলেই মানুষ ওই আশ্রয়ের দিকে রওনা হবে। ছাত্র, কর্মচারী, শিক্ষক, অবসরভোগী, শ্রমিক, কৃষক, রাজনৈতিক কর্মী—সবাই আসবে। মিলবে মিশবে; সামাজিক হবে। আলোচনা করবে ব্যবস্থা-পরিবর্তনের মতাদর্শ নিয়ে। সবকিছুর ভেতরই মতাদর্শিক বিবেচনাটা থাকবে, মিছরির ভেতর যেমন সুতো থাকত, যে সুতো ছাড়া মিছরি তৈরি করার কথা ভাবা যেত না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও