ঘরবাড়িতে হোক পরিবেশবান্ধব ইন্টেরিয়র
প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং আধুনিকতায় এগিয়ে চলছে বিশ্ব। আধুনিকতার পথে হাঁটতে গিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক হয়ে যাচ্ছে মানুষের। সেই সম্পর্কের বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে মানুষ আবার দ্বারস্থ হচ্ছে প্রকৃতির; সবুজের এবং সেটা এখন শুরু হয়েছে ঘর থেকেই। ঘরবাড়ি তৈরি ও সাজানোর ক্ষেত্রে মানুষ এখন সবুজের ছোঁয়া খোঁজেন। প্রাকৃতিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে। অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন পরিবেশবান্ধব ঘরবাড়ির দিকে। তাঁদের জন্যই পরামর্শ দিয়েছেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপারসন গুলশান নাসরীন চৌধুরী। তিনি বলেন—
জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে বর্তমান পৃথিবী যেখানে একের পর এক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, তাতে আমাদের উচিত নিজেদের জায়গা থেকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করা। এর শুরুটা দরকার নিজের ঘর থেকেই। পরিবেশবান্ধব ইন্টেরিয়র ডিজাইন বলতে বোঝায় বাসাবাড়ির নকশায় এমন উপকরণ ব্যবহার করা, যা আমাদের পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব হ্রাস করে প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করবে। ঘর আমাদের প্রশান্তির জায়গা। সেই ঘরের ডিজাইন হতে হবে অবশ্যই দৃষ্টিনন্দন এবং একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব।
প্রযুক্তির এই যুগে আমরা নিজেদের কষ্ট লাঘবে বাড়িঘরে এমন অনেক কিছুই ব্যবহার করি, যা একই সঙ্গে শরীর ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্রকৃতির স্পর্শ, সবুজের ছোঁয়া থাকলে তা যে শুধু ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়, তা নয়, সেই সঙ্গে শরীর ও মনকে সতেজ রাখে। তাই বাড়ির অভ্যন্তরীণ নকশা করতে গেলে আমাদের নিজেদের সুবিধার কথা চিন্তা করার পাশাপাশি অবশ্যই পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণের কথা চিন্তা করতে হবে।
ঘরবাড়ির ইন্টেরিয়র পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই করতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়—
শক্তির সঠিক ব্যবহার
ঘরবাড়িতে পরিবেশবান্ধব ইন্টেরিয়রের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে শক্তিকে সঠিক এবং যথাযথ ব্যবহারের দিকটা। এ জন্য প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাকৃতিক উপায় খুঁজে বের করা হলো প্রথম ধাপ। আমাদের বাসাবাড়ি তৈরি থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত অত্যাধুনিক লাইট, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশন ইত্যাদির ব্যবহারে প্রচুর পরিমাণে শক্তির ক্ষয় হয়। তাই পরিবেশবান্ধব ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মূলনীতিই হলো এসবের ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং ডিজাইনে গ্রিন টেকনোলজির ব্যবহার বাড়ানো। ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জানালা বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা উচিত। দরজা-জানালা দিয়ে যেন সঠিকভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তাতে দিনের বেলায় লাইট এবং ফ্যানের ব্যবহার কম হবে। লাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এলইডি লাইট ব্যবহার করা উচিত, যা ৭৫ শতাংশ শক্তি অপচয় রোধ করে থাকে।
আসবাব হোক কাঠের
ঘরের সৌন্দর্যে প্রথমেই পছন্দসই আসবাবে আগ্রহী হই আমরা। পরিবেশবান্ধব ইন্টেরিয়রে আসবাবের দিকে নজর দিতে হবে। যেমন আসবাব বানানো বা কেনার ক্ষেত্রে উপাদান হিসেবে কাঠ বা পাথরকে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। এসব উপাদান দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি তাপ–সংরক্ষক হিসেবেও কাজ করে। কাঠের গুণগত মান যাচাইয়েও লক্ষ রাখতে হবে।
সে ক্ষেত্রে কাঠের তৈরি আসবাব কেনার ক্ষেত্রে এর ম্যাটেরিয়াল বা উপাদান সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। অপর দিকে বাঁশ বর্তমান সময়ে আসবাবে ব্যবহারের অন্যতম উপাদান। বাঁশ সহজেই প্রতিস্থাপন করা যায় এবং এটি নবায়নযোগ্য উপাদান। তাই আসবাবে বাঁশের ব্যবহার হতে পারে অন্যতম পরিবেশবান্ধব উদাহরণ। এটি দৃষ্টিনন্দন টেকসই আসবাবে আপনার ঘরকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারেন।