এক প্যাকেট বেনসন আর চা-শ্রমিকের মজুরি
এক প্যাকেট বেনসন সিগারেটের দাম কত? এক কেজি চালের দাম কত? চা-শ্রমিকদের মজুরি কত?
প্রথম প্রশ্নটি তাঁদের উদ্দেশে, যাঁরা ভাত খাওয়ার আগে-পরে নেশায় পড়ে সিগারেট খান। দ্বিতীয় প্রশ্নটি এ দেশের ভাতপ্রেমী মানুষের জন্য (কেউ যদি বার্গার অথবা পাস্তা পছন্দ করে থাকেন, কিংবা খেজুর, তবে তাঁরা এই প্রশ্ন থেকে অব্যাহতি পাবেন)। তৃতীয় প্রশ্নটি সবার জন্য, কারণ প্রথম দুটি প্রশ্নের উত্তর সংশ্লিষ্টরা দিতে পারলেও তৃতীয় প্রশ্নটি উন্মুক্ত হওয়ায় যে কেউ উত্তর দেওয়ার আগে হোঁচট খাবেন। আদতেই চা-শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হওয়ার আগে অনেকেই জানতেন না, ১২০ টাকা দৈনিক মজুরি আর কিছুটা রেশনের বিনিময়ে চা-শ্রমিকেরা কাটিয়ে দেন তাঁদের জীবন।
চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলার আগে নিজ পর্যবেক্ষণের কিছু কথা বলে নিতে চাই। খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুরে জুট মিলগুলো গত শতকের নব্বই দশক পর্যন্ত যেভাবে চলছিল, তা ব্রিটিশ রাজের বিলাসিতার কথাই মনে করিয়ে দিত। এরপর কোনো পরিবর্তন হয়েছিল কি না, জানি না। সে সময় পর্যন্ত পাটে লোকসান হচ্ছিল, কিন্তু কর্মকর্তাদের জীবনধারায় আভিজাত্যের কমতি ছিল না। আশি ও নব্বইয়ের দশকে বেশ কয়েকবার খুলনার কয়েকটি পাটকল কারখানায় আতিথ্য গ্রহণের সুযোগ হয়েছিল। তখন কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের জীবনযাপন পদ্ধতির মধ্যে বিশাল ব্যবধান আমি নিজের চোখে দেখেছি। কর্মকর্তারা আক্ষরিক অর্থেই থাকতেন রাজার হালে। কারখানার মধ্যে যে বাড়িগুলোতে তাঁরা থাকতেন, সেগুলোয় যে বিলাসব্যসন ছিল, সেটা কারখানার শ্রমিকেরা কেবল দূর থেকে দেখতে পেতেন। শ্রমিকেরা দল বেঁধে থাকতেন একেবারে বস্তিবাসীর মতো। যাঁদের শ্রমে তৈরি হতো পাটজাত দ্রব্য, তাঁদের জীবনযাত্রার মান ছিল অবর্ণনীয়।