বন্যার কারণে বাংলাদেশে বাড়ছে জলবায়ু শরণার্থী
বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে বাংলাদেশে বাড়ছে জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা৷ পরিসংখ্যান বলছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকায় আসছে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ৷ এদের বেশিরভাগই উপকূলের বাসিন্দা৷
এক বছর আগের ঘটনা৷ ভোলা জেলার রামদাসপুর গ্রাম৷ মেঘনা নদী যখন প্রমত্তা হয়ে উঠেছিল তখন মোহাম্মদ জুয়েল এবং আরজু বেগম টিনের ঘরের চালে বসে রাত কাটিয়েছেন৷ তখনই সিদ্ধান্ত নেন আর এখানে নয়৷ পরদিন চার সন্তানকে নিয়ে পূর্বপুরুষের ভিটে-মাটি ছেড়ে তারা চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়৷
কেবল রামদাসপুর গ্রাম নয়, ভোলার বেশিরভাগ গ্রামের মানুষের অবস্থাই জুয়েলদের মত৷ জুয়েল সংবাদ সংস্থা এপিকে জানান, ‘‘আমরা এই নদীতীরেই বড় হয়েছি৷ মাছ ধরেছি এই নদীতে৷ অথচ এই নদী আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে৷ এই গ্রামে আমার জন্ম৷ গ্রামের জন্য মন কাঁদে৷ কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না৷''
বাংলাদেশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ১৩০টি নদী৷ এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বন্যাপ্রবণ৷বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের আবহাওয়া অপ্রত্যাশিত আচরণ করছে৷ এর ফলে প্রায়ই নদী ভাঙনে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে৷ জুন থেকে অক্টোবর বাংলাদেশে বর্ষাকাল৷ এ সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা৷ এর ফলে নদী তীরে থাকা বাজার, স্কুল, মসজিদ, ঘর-বাড়ি পানিতে ভেসে যায়৷ ফলে লাখো মানুষের গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়৷ অনেকেই পরিণত হন ‘জলবায়ু শরণার্থীতে'৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কেবল বন্যা নয়, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙন এবং অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি মাটিতে প্রবেশ করার কারণেও বাড়ছে জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা৷বিশ্ব ব্যাংকের গত বছরের রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে যে হারে জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে ২০৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে চলে আসবে দেশটি৷ অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ অভিবাসীর সংখ্যার দিক দিয়ে এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে চলে যাবে৷