বাঙালি’র রক্তক্ষরণের আগস্ট
বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত দিন ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫; যেদিন আমরা হারিয়েছিলাম মহান স্বাধীনতার স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে। এটি নিছক কোনো সাধারণ হত্যা ছিল না কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলই এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্য ছিল না; এটি ছিল মূলত একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের আন্তর্জাতিক দোসরদের সুগভীর চক্রান্তে সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
এ সময় বঙ্গবন্ধু ছাড়াও হত্যা করা হয় তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণিতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল ও বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকে।
বাস্তবিক অর্থে, ১৫ আগস্ট ছিল সুপরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড। ১৫ আগস্ট ছিল বাঙালির স্বাধিকারকে অস্বীকার করা এবং এর প্রতিশোধ নেওয়ার চূড়ান্ত নমুনা। ১৫ আগস্ট ছিল বাঙালির পরিচয় বা জাতি সত্তার ওপর আঘাত করা। ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে নয়, বরং হত্যা করা হয় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনাকে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তিপূর্ণ মিছিলে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায় স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সদস্যরা। যুদ্ধে ব্যবহৃত গ্রেনেড শান্তি মিছিলে ব্যবহার পৃথিবীর ইতিহাসে একটি ঘৃণিত কাজ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সে দিন আওয়ামী লীগের প্রায় ২৫ জন নেতাকর্মী নিহত এবং অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হন।
আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করতে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আর কোনো দিন ক্ষমতায় না আসতে পারে এবং সেজন্য এ দেশটি আইএসআই নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তানি ভাবধারায় তাবেদারি রাষ্ট্রে পরিণত হয়- সে জন্য এ হামলা চালানো হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়ায় সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্মীদের ভালোবাসার হৃদয় নিঙড়ানো মানবঢালে বেঁচে যান ভয়াবহ এই দুরবস্থা থেকে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক ও বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ফলে আমরা দেখলাম বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধঃপতনের পেছনে এসব কর্মকাণ্ডের ভূমিকা ছিল জোরালো।
আগস্টের ঘটনাপ্রবাহে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়াল দিন। সেদিন সকালটি শুরু হয়েছিল অন্য সকালের মতোই। কিন্তু বেলা গড়াতেই সারাদেশ থেকে আসতে থাকে বোমা হামলার খবর। একটি দুটি জেলা নয়, একেবারে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা। মোট ৪৩৪ স্থানে এ হামলা হয়! তাও প্রায় একযোগে ঘটে সে হামলা।ভয়াল সেদিন জঙ্গিদের বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল সারাদেশ। ইতিহাসের পাতায় লেখা নজিরবিহীন এমন কাণ্ড আজও আতঙ্কিত করে দেশবাসীকে।