স্বাধীনতার অতীত ও ভবিষ্যৎ
দেশের শাসক দলের কাছ থেকে নির্দেশ এসেছে, ভারতবর্ষের ইতিহাস পুনর্লিখন করতে হবে। বিশেষ করে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিবৃত্ত। দেশের ভবিষ্যৎ গড়বার পক্ষে সেটা বিশেষ জরুরি।শুনে কিছু ভাবনা হল। কী ভাবে আবার ইতিহাস লিখতে হবে? অবশ্য সঙ্ঘ পরিবারের তরফ থেকে এ প্রস্তাব নতুন নয়। বাজপেয়ী-আডবাণী জমানায় এই প্রকল্প অনেক দূর গড়িয়েছিল।
তখনও হিন্দুত্বের আলোয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি বিস্তৃত পুনর্মূল্যায়ন হয়েছিল। স্কুলে থাকতে আমরা শিখেছিলাম যে, জাতির জনক হলেন মহাত্মা গান্ধী, আর তাঁর দুই শিষ্য নেহরু ও পটেল প্রথম ভারত সরকারের নেতা হন, মৌলানা আজাদের সঙ্গে। এঁদের সরকারের এক বিকল্প পূর্বতন সরকার ছিল আজাদ হিন্দ সরকার, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু, ইতিহাসের মাস্টারমশাইরা এও আমাদের শিখিয়েছিলেন।
এ বার কিন্তু নতুন করে আমাদের বোঝানো হল, স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সারির নেতা হলেন বিনায়ক দামোদর সাভারকর এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, আর হিন্দুত্বের পরম্পরাগত প্রতিষ্ঠান হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, জনসঙ্ঘ ও ভারতীয় জনতা পার্টি হল আসল ন্যাশনালিজ়ম-এর প্রবক্তা। স্বীকার করব, এই ‘লেসন’ সহজে হজম হয়নি। কিন্তু সত্যিকারের পিলে চমকে গেল, যখন শিক্ষক হওয়ার পর এক জন বিজেপি নেতার মুখে শুনলাম, হরপ্পার সভ্যতা ছিল আসলে আর্য সভ্যতা, এবং আর্যরা এ দেশে জন্মে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল।এ সব চমকের সঙ্গে ত্রিশ বছর আগেই পরিচয় হয়েছিল। এখন ভাবনা হল, হিন্দুত্ব আবার কোন নতুন মুখ নিয়ে হাজির হতে চলেছে? চমকে গিয়ে নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম, যা শুনছি তা ঠিক শুনছি তো? মনের মধ্যে এই আলোড়ন ঘটাল স্বাধীনতা দিবসে শাহজাহানবাদের লাল কেল্লা থেকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (ছবি) বাণী। শেষ পর্যন্ত মোগল বাদশাহ শাহজাহানের গড়া দুর্গের প্রাকার থেকেই এক হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রীকে দেশের অতীত ও বর্তমান মিলিয়ে তাঁর ‘সঙ্কল্প’ প্রকাশ করতে হল? বক্তৃতা শুনে বিস্মিত হয়ে ভাবতে লাগলাম, কতকাংশে এ তো আমারই মনের কথা, এ কী করে মোদীর ‘মন কি বাত’ হয়?