১৫ আগস্ট : নেপথ্যের কুশীলব কারা?
দাবিটি অনেক দিনের। বিষয়টি জরুরি, ইতিহাসের স্বার্থেই। কবিরা কি অন্তর্যামী হন? দেশের তখ্তে তখন লেবাস পাল্টে সেনাশাসক। জাতির পিতার খুনে রাঙা বাংলায় ঘাতকদের উল্লাস। ১৬ জুলাই ১৯৭৮ এক তরুণ ছড়াকার লিখেন : “রক্ত ঝরার অভিষেকে বসেছিলে তখ্তে / তোমার মরণ হবেই বাবা / এমনি ধারার রক্তে।”
মাত্র তিন বছরের মাথায় ছড়ার ছন্দ সত্য প্রমাণিত হলো। ১৯৮১ সালে উল্টে গেল তখ্ত। রক্তের অভিষেকে যিনি তখ্তে বসেছিলেন, রক্তেই তার পরিসমাপ্তি। কিন্তু সুস্পষ্টভাবে জানা হয় না, এই ক্ষমতায় যাওয়ার রক্তের সিঁড়ি তৈরির ক্ষেত্রে নেপথ্যে কার কি ভূমিকা ছিল।
পদ্মায় মেঘনায় অনেক জল গড়ায়। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়। সময় লাগে প্রায় ১২ বছর। কিছু খুনির ফাঁসি হয়েছে, কিছু খুনি পালিয়ে আছে। কেউ কেউ এমন বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের মধ্য দিয়ে জাতি দায়মুক্ত হয়েছে। আমি বলি, শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতি যে অপরাধ করছে, তা থেকে এই জাতির কোনোদিন মুক্তি নেই।
মুজিব হত্যার পাপের গ্লানি এই জাতিকে বয়ে বেড়াতে হবে অনাদিকাল। তবুও, খুনের বিচার তো হয়েছে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের বিচারও কি পুরোপুরি হয়েছে? জবাব হচ্ছে : ‘না।’ প্রকাশ্যে যাদের দেখি, সেই খুনিদের বিচার হয়েছে; কিন্তু এই হত্যা ও যড়যন্ত্রের নেপথ্যের কুশীলবদের বিচার আজও হয়নি। এমনকি প্রামাণিক সত্য দিয়ে তাদের দায়ও নিরূপণ করা হয়নি।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মাননীয় বিচারপতিগণের পর্যবেক্ষণ : ‘খন্দকার মোশতাক আহমেদের কুমিল্লার দাউদকান্দির বাড়ি ও কুমিল্লার বার্ড থেকে ষড়যন্ত্রের শুরু। এরই ধারাবাহিকতায় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ড যথেষ্ট পরিকল্পনাভিত্তিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের চেহারা স্পষ্ট হয়, সেনানিবাসের বালুর ঘাটে। পঁচাত্তরের মার্চে যে ষড়যন্ত্রের শুরু, তার চূড়ান্ত পরিণতি আগস্টে মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভা গঠনের মাধ্যমে।’
রায়ে এক সম্মানিত বিচারপতি বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্রের অকাট্য প্রমাণের প্রয়োজন নেই। বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ থাকলেই হবে যে, কোনো ব্যক্তির কার্যক্রম, বিবৃতি ও লেখা অপরাধ সংগঠনে ষড়যন্ত্র করেছে। কোনো ব্যক্তি কথা বা কাজের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রে যোগ দিতে পারে। সকল ষড়যন্ত্রকারী অভিন্ন উদ্দেশে একমত হতে হবে।’