হাঁপ ছেড়ে বাঁচার লড়াই আরও কঠিন হতে পারে
দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সপ্তাহখানেক আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে কমে আসবে। গত ৫ আগস্ট ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম গড়ে ৪৭ শতাংশ বাড়ানোর পর অর্থমন্ত্রীই বলেছেন, এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। অবশ্য পরিস্থিতি অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করেনি। তেলের দাম বাড়ানোর পরপরই পণ্যবাজার আরও অস্থির হয়ে পড়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মতামত এবং বৈশ্বিক ও স্থানীয় প্রবণতা পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, আমদানি ব্যয়ের চাপ কিছুটা কমে আসা এবং জুলাই মাসে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থনীতির চলমান সংকট শিগগির কমে আসবে বলে নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে যে আভাস দেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবে ঘটার সম্ভাবনা কম। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ইতোমধ্যে মানুষের জীবযাত্রার ব্যয়ে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আবার ডলারের দাম কমারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত ৪ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দুই-তিন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হারের ওপর চাপ কমে আসবে। সর্বশেষ লেনদেন দিনে গত বৃহস্পতিবার আমদানিকারকরা ডলার কিনেছেন ১০৯ থেকে ১১২ টাকা দরে। এক বছর আগে যা ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা ছিল। আর এক মাস আগে ছিল ১০২ থেকে ১০৫ টাকা।
অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, সহসাই সংকট কেটে যাবে বলে মনে হয় না। কারণ এখনও প্রতি মাসে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় থেকে যে পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, আমদানি বাবদ চলে যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি। আবার পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তার সুফল এখনও পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানির যে সুযোগ বাড়িয়েছে, আমদানিকারকরা তা নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কারণ ভবিষ্যতে ডলারের মূল্য কোথায় ঠেকবে তার অনিশ্চয়তায় ব্যবসায়ীরা ঋণ করে পণ্য আমদানিতে ঝুঁকি দেখছেন।
তবে আমদানি ব্যয় আগামীতে কমে আসবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ আমদানির জন্য দেশের ব্যাংকগুলোতে যেসব বড় এলসি খোলা হচ্ছে, সেখানে পণ্যমূল্য কত ধরা হচ্ছে আর বিশ্ববাজারে প্রকৃত মূল্য কত তা যাচাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেখা যাচ্ছে, অনেক এলসিতে যে দাম ধরে মূল্য প্রস্তাব করা হচ্ছে বিশ্ববাজারে ওই পণ্যের প্রকৃত মূল্য তার চেয়ে কম। ব্লুমবার্গ, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন সংস্থার পণ্যমূল্যের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই দর যাচাই করছে। এতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বড় এলসিতে পণ্যের যে দর ধরা হচ্ছে আর আন্তর্জাতিক বাজারের দরের মধ্যে অসংগতি পাওয়া যাচ্ছে। ওইসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকৃত দর ধরে এলসি মূল্য নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।