অর্থ পাচার রোধ: সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা নিতে পারবে
অর্থ পাচার রোধে সরকার কি পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিয়েছে— অত্যন্ত যৌক্তিক কারণে এ প্রশ্ন সাম্প্রতিক কালে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁদের পক্ষ থেকে যে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ চাইলে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকের যে অর্থ জমা বা লেনদেন হয় তার তথ্য পাওয়া সম্ভব, তা বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর মতে, বাংলাদেশ তা অনুসরণ করে এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের কাছে জানতে চেয়েছেন, সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে কি না। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সুইস রাষ্ট্রদূত সুইস ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশিদের অর্থ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থসচিব আগে জানিয়েছিলেন যে তথ্য চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সুইস ব্যাংক কোনো উত্তর দেয়নি।
কোনো না কোনো পর্যায়ে হয়তো এই বিতর্ক স্তিমিত হবে। তবে তার আগে বা পরে কোন পক্ষের অবস্থান সঠিক, এই কৌতূহল মিটুক বা না মিটুক, যে প্রশ্ন উন্মুক্ত থেকেই যাবে, তা হলো অর্থ পাচার ও সংশ্লিষ্ট অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সরকারের হাতে যে সম্ভাব্য প্রক্রিয়াগুলো রয়েছে, তার পর্যাপ্ত সুযোগ নেওয়া হয়েছে কি না বা হবে কি না।
অর্থ পাচার একটি জটিল ও সূক্ষ্ম (সফিস্টিকেটেড) অপরাধ। অর্থ পাচার প্রতিরোধ, পাচার চিহ্নিতকরণ, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং পাচারকারীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা সব সময় ও সব দেশের জন্যই দুঃসাধ্য, এমনকি প্রায় অসম্ভব বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইনি কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ফলে সে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যার সুফল অর্জন বাংলাদেশসহ সব আগ্রহী দেশের হাতের নাগালে। অবশ্যই সরকারের যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে এবং প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং প্রভাবশালী পাচারকারীদের প্রতি ভয়-করুণার কাছে অকার্যকর না হয়ে যায়।