গৃহকর নির্ধারণে নতুন আইন প্রয়োজন

www.ajkerpatrika.com ড. মইনুল ইসলাম প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২২, ১২:১২

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সিটি করপোরেশনের গৃহকর বাড়ানোর জন্য করহার নির্ধারণে ১৯৮৬ সালের ‘দ সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ অধ্যাদেশটি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি মনে করি এটা মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। ২০২১ সালে আমি তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম যে ভূতপূর্ব মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৬ সালে একই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ করতে গিয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা হারিয়ে চরম বিপদে পড়েছিলেন। ওই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে বর্ধিত গৃহকর বিদ্যমান করের তুলনায় ছয় থেকে দশ গুণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছিল।



চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও ওই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। এর কিছুদিনের মধ্যে একই ভুল অধ্যাদেশ অনুসরণ করতে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদানীন্তন মেয়র সাঈদ খোকনকেও ব্যাপক আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছিল। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আন্দোলনের তীব্রতায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাপারটা স্থগিত হয়েছিল। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া রেজাউল করিম চৌধুরী ভুল অধ্যাদেশটির সংশোধনের উদ্যোগ না নিয়ে আবারও ওটাই অনুসরণে গৃহকর বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই করদাতাদের কাছে নতুনভাবে নির্ধারিত গৃহকরের চাহিদাপত্র পৌঁছে গেছে। সাবেক মেয়র নাছির উদ্দীনের মতো পত্রপত্রিকায় মেয়র রেজাউল করিম মন্তব্য করে চলেছেন যে সংক্ষুব্ধ করদাতা সিটি করপোরেশনের কাছে আপিল করলে গৃহকর কমিয়ে দেওয়া হবে।


এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতির ফ্লাডগেট যে খুলে দেওয়া হচ্ছে, সেটা কি তিনি বুঝতে পারছেন না? অযৌক্তিকভাবে গৃহকর বাড়িয়ে দিয়ে আপিলের মাধ্যমে তা কমিয়ে দিলে শুধু দুর্নীতিই বাড়বে। সরকারকেও উপলব্ধি করতে হবে যে বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ মারাত্মক ভুল পদ্ধতি। গৃহকর যেহেতু সম্পত্তি কর (প্রোপার্টি ট্যাক্স), তাই সারা বিশ্বের সিটি গভর্নমেন্টগুলো সম্পত্তির লোকেশন, স্থাপনার মান ও ধরন এবং আয়তনের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করে থাকে। করদাতার বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে যেহেতু এনবিআর কর্তৃক আয়কর নির্ধারিত হয়, তাই আবার হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণেও যদি বাড়িভাড়ার আয়কেই নির্ধারক বিবেচনা করা হয়, তাহলে ‘ডবল ট্যাক্সেশন অব ইনকাম’ সমস্যার উদ্ভব হবে, যা করনীতির চরম লঙ্ঘন বিধায় বাতিলযোগ্য।


২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকের প্রধান শিরোনাম হিসেবে যে চাঞ্চল্যকর খবরটা প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো, দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে মোট ছয় ধরনের গৃহকরের হার বলবৎ রয়েছে, যেখানে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বার্ষিক সর্বনিম্ন ১২ শতাংশ, খুলনা সিটি করপোরেশনে ১৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ১৭ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ১৯ শতাংশ, সিলেট ও রংপুর সিটি করপোরেশনে ২০ শতাংশ এবং রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ২৭ শতাংশ হারে গৃহকর আদায় করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু এই ছয় রকমের গৃহকরের হারের ফলে রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের করদাতারা অন্য ৯ নগরীর করদাতাদের চেয়ে বেশি পরিমাণ গৃহকর দিচ্ছেন বলে ধারণা করলে ভুল হবে। কারণ, এই ১১টি সিটি করপোরেশনে বাড়ির ভ্যালুয়েশনে কোনো ইউনিফর্ম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। বাংলাদেশের ১১টি সিটি করপোরেশনের গৃহকর নির্ধারণ ও আদায়ের পদ্ধতিগুলোতে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। অতএব অবিলম্বে দেশের সব সিটি করপোরেশনের গৃহকর নির্ধারণ পদ্ধতিকে ইউনিফর্ম করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন (বা কমিটি) গঠন করে কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অবিলম্বে সংসদে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া ফরজ হয়ে গেছে। কারণ, ১৯৮৬ সালের ‘দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ অনুসরণে এই ১১টি সিটি করপোরেশনের যেখানেই গৃহকর নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেখানেই করদাতাদের তোপের মুখে পড়তে হবে কর্তৃপক্ষকে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও