পণ্য পরিবহন ভাড়ায় বিশৃঙ্খলা
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পণ্য পরিবহনে ছয় চাকার গাড়িতে ডিজেল দরকার হয় ৬০ থেকে ৭০ লিটার। সেই হিসাবে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা বাড়ানোয় খরচ বেড়েছে ২ হাজার ৪০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩৮০ টাকা। কিন্তু পরিবহন কোম্পানিগুলো ভাড়া বাড়িয়েছে চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা।
একইভাবে নৌপথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অঞ্চলে যেতে দেড় থেকে দুই হাজার টন পণ্যবাহী জাহাজে জ্বালানি তেল লাগে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার লিটার। এতে প্রতিটি জাহাজে জ্বালানি খরচ বাড়বে জাহাজভেদে ৮৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এতে টনপ্রতি বাড়তি পরিবহন খরচ দাঁড়ায় ৫১ থেকে ৫৬ টাকা। তবে গত বৃহস্পতিবার নৌপথে চট্টগ্রাম থেকে গন্তব্যভেদে ১৫ থেকে ২২ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, যা ৬ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর গন্তব্যে টনপ্রতি ১০৫ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেড়েছে।
সমুদ্র, স্থলবন্দর ও আকাশপথ—এই তিন পথে মোট পণ্য আমদানির ৭৩ শতাংশই হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এই পণ্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে নৌ ও সড়কপথে সবচেয়ে বেশি পরিবহন হয়। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সুযোগে পরিবহন কোম্পানিগুলো প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়ার বোঝা পড়ছে সাধারণ ভোক্তাদের ঘাড়ে।
সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বলছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিকভাবে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বাড়বে। কিন্তু জ্বালানি খরচের তুলনায় ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়েছে পরিবহন কোম্পানিগুলো। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার খরচ বেড়েছে। এই বাড়তি খরচ পণ্য আমদানিসহ সার্বিকভাবে উৎপাদন খরচের সঙ্গে যোগ হবে। তাই শেষ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়ার বোঝা সাধারণ মানুষের কাঁধে পড়বে।
রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার উদ্যোক্তারা বলছেন, পরিবহন খরচ যত বাড়বে, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় তত পিছিয়ে পড়বে দেশের রপ্তানি খাত।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির অর্থ হলো, ভোক্তার কাঁধে বাড়তি চাপ। তাই যৌক্তিক খরচের চেয়ে ভাড়া যাতে বেশি না বাড়ে, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
এনবিআর ও বন্দর সূত্র জানায়, সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর—এই তিন পথে ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয় ১৩ কোটি ৯৮ লাখ টন। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয় ১০ কোটি টন বা ৭৩ শতাংশ। এই পণ্যের ৭১ শতাংশই নৌপথ, ২৮ শতাংশ সড়কপথ এবং শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ রেলপথে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পরিবহন হয়েছে। অর্থাৎ বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের ৯৯ দশমিক ৪২ শতাংশ পণ্য পরিবহনে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।