মেলেনি কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ মুক্তির ৫০ বছরপূর্তি আজ। ঐতিহাসিক এই চলচ্চিত্রটির প্রযোজক নন্দিত চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘ওরা ১১ জন’ নানা কারণেই এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য অনবদ্য। তবে দুঃখের বিষয় হলো- যে চলচ্চিত্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল স্বরূপ, তার ভাগ্যে জোটেনি কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
এমনকি এর প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পী কেউ কোনো সম্মাননা পাননি এই ৫০ বছরেও। ছবিটি যখন নির্মাণের কথা ভাবেন, সোহেল রানা তখন স্বাধীন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্রস্থল বলে অভিহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের ছাত্র। সদ্য মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। সেখানে তখন আনাগোনা সব নামকরা ছাত্র রাজনীতিকের। নাম বললে সে তালিকা হবে দীর্ঘতর।
সেখানে মাঝেমধ্যে আসতেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সোহেল রানা জানান, প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ে পড়াশুনার দিক দিয়ে এক ক্লাস জুনিয়র। সে সময় ইকবাল হলে ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে চর্চিত বিষয় মুক্তিযুদ্ধ। এক একজন তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তাতে উঠে আসে আলাদা শ্রেণি-পেশার মানুষের আলাদা আলাদা ত্যাগের গল্প। সেই গল্পগুলোকেই এক সুতায় গাঁথার জন্য ‘ওরা ১১ জন’ নির্মাণের কথা ভাবেন সোহেল রানা। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৭২ সালে আর কী গল্প মাথায় আসতে পারে? আমি তো সিনেমার মানুষ নই। তবে এর আগে গল্প লিখতাম, সিনেমা নিয়ে পড়াশুনা করতাম।
চিত্রবাণীতে সিনেমা নিয়ে লেখালেখিও করতাম। একদিন হলের দারোয়ান বলল, ‘স্যার আপনারা তো অনেকে ফিরে এলেন। সব স্যার তো ফিরলেন না।’ কথাটা আমার মধ্যে দারুণভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তখনই ভাবি, যারা আর ফিরলেন না, যারা এত ত্যাগের বিনিময়ে দেশটি স্বাধীন করলেন তাদের এই গল্পগুলো মানুষকে জানানো উচিত। তখন শুধু একটা বিষয়ই মাথায় এসেছিল, তা হলো- মুক্তিযুদ্ধ যে হয়েছে সেটার প্রমাণ যেন থাকে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এ থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারে। এরপর পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের সহায়তায় ছবিটি শেষ করি।’