এখনো বই পায়নি সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা
‘আমার বাংলা বই পানিতে ভাইসসা গেছেগি। আম্মায় বাকি বই হখল হুকাইয়া দিছইন। ওখন বই নাই। স্যারে খইছন দিবা। এক মাস অইযার (হয়েছে) বাংলা পড়ি না। বই না তাখায় আমার মামাতো ভাই সাকিবুল হাসান, বইন বৃষ্টি আক্তার ও লাগাবাড়ির কবির হোসেন ইশকুলে আয় না। আমি এখলা এখলা আই। না আইলে আম্মায় মারইন।’ কথাগুলো সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সোনাপুর ভেদেপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাগরিকা আক্তারের।
সাগরিকা যখন বন্যায় বই হারানো কথা বলছিল, তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারিক ও তারিবা আক্তারের মা প্রদিনা খাতুন। তিনিও বলেন, ‘বন্যায় আমরার ঘরের হখলতা ভাসাইয়া নিছেগি। বাচ্চারার বই না তাখায় স্কুলে আইতে চায় না। ওখন নিজে দইরা লইয়া আইছি। স্যারে খইছন বই আইলে দিবা।’
শুধু সাগরিকা, সাকিব, বৃষ্টি, তারিক ও তারিবাই নয়; এই অবস্থা সুনামগঞ্জ জেলার ১ হাজার ৪৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর। দুই দফা ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ির পাশাপাশি বই-খাতা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তাদের। অনেকের স্কুলড্রেসও হারিয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরাও। দেখা দিয়েছে ঝরে পড়ার আশঙ্কাও।
এসএসসি পরীক্ষার্থী, দশম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জেলা থেকে বই সংগ্রহ করে দেওয়া হলেও এখনো বই পায়নি ষষ্ঠ,সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বন্যায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র, দরজা-জানালা নষ্ট হয়ে গেছে। দেবে গেছে ফ্লোর। অনেক প্রতিষ্ঠানের সামনে-পেছনের মাটিও সরে গেছে। টানা চার দিন সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিন ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জে এখন হাহাকার চলছে। ধনী-গরিব সবার একই অবস্থা। শিশুদের বই-খাতা কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই মানুষের। ফলে যেসব শিক্ষার্থীর বই-খাতা, স্কুলড্রেস বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের অনেকে ইতিমধ্যে ঝরে পড়তে শুরু করছে।’