জনজীবন, কৃষি ও শিল্প খাতের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে

বণিক বার্তা সম্পাদকীয় প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২২, ০৩:০০

শুক্রবার রাতে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। নতুন মূল্যহার অনুযায়ী লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এখন ১১৪, অকটেনের দাম ১৩৫ আর পেট্রলের দাম ১৩০ টাকা। আগের চেয়ে ভোক্তা পর্যায়ে উল্লেখিত চার জ্বালানি পণ্যের দাম বেড়েছে সাড়ে ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত। করোনার অভিঘাত ও মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ বেশ কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ দুঃসময়ে অতিমাত্রায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি জনজীবন, কৃষি ও শিল্প খাতের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে।


গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক দফা বাড়ানো হয়। ওই সময় এ দুই জ্বালানির দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৮০ টাকা। আট মাসের ব্যবধানে আবার বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম। তবে তখন পেট্রল আর অকটেনের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল। এবার সব ধরনের জ্বালানি তেলেরই দাম বাড়ল। সবচেয়ে উদ্বেগের হলো, এবারের মূল্যবৃদ্ধির হারটা অনেক বেশি; প্রায় ৫০ ভাগ। এর প্রভাব হবে সর্বব্যাপ্ত। দেশের মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে। পরিবহন ব্যয় আরেক দফা বাড়বে। এরই মধ্যে পরিবহন মালিকরা ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বৈঠকে বসেছে। সিটি বাসের ভাড়া ১৩ শতাংশ আর দূরপাল্লায় ১৬ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া লঞ্চ, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপসহ সব ধরনের পরিবহনের ভাড়াও বাড়বে। স্বভাবত নিত্যপণ্যের দামও আরো বাড়বে। শিল্প খাতের কর্মকাণ্ডেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে বেড়ে যাবে সেচ খরচও। এতে কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এখন চলছে আমন মৌসুম। ফলে আমন উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেলের প্রভাব হবে বহুমুখী।


রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে উদ্বায়িতা সৃষ্টি করেছে। তৈরি হয়েছে জ্বালানি অনিশ্চয়তা। এ প্রেক্ষাপটে অনেকেই জ্বালানির ব্যবহার সীমিত করেছে। অনেকে আবার খাতওয়ারি জ্বালানি বণ্টন যৌক্তিকীকরণের চেষ্টা করছে। কেউ কেউ কৌশলগত মজুদ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নিয়েছে। যেমন চীন ও ভারত রাশিয়ার সস্তা জ্বালানি তেল কিনে বিপুল মজুদ গড়ে তুলছে। বলা চলে, জ্বালানি সংকট মোকাবেলা এবং দামজনিত অভিঘাত থেকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে দেশগুলো। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।


গতবারের মতো এবারো সময় না দিয়েই কার্যকর হয়েছে বর্ধিত দাম। আকস্মিক এ মূল্যবৃদ্ধির ব্যাখ্যা হিসেবে জ্বালানি মন্ত্রণালয় কিছু কারণ তুলে ধরেছে। প্রথমত বলা হচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারি-জুলাই পর্যন্ত জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি প্রায় ৮ হাজার ১৪ টাকা কোটি টাকার ওপরে লোকসান দিয়েছে। এ ধারা বজায় থাকলে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির লোকসানের বোঝা আরো বাড়বে। দ্বিতীয়ত বলা হচ্ছে, প্রতিবেশী ভারতে জ্বালানি তেলের দাম তুলনামূলক বেশি ছিল। গত মাসের হিসাবে কলকাতায় প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ টাকা বেশি ছিল। আর পেট্রলের দাম বেশি ছিল প্রতি লিটার প্রায় ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা। এ পার্থক্যের কারণে জ্বালানি পণ্যের পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত এসব কারণে বর্তমান অবস্থায় অনেকটা নিরুপায় হয়েই নাকি জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন ভিন্ন কথা। সরকার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপে আছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে। আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার। হঠাৎ করে বড় মাত্রায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে বৈশ্বিক সংস্থাটির শর্ত পূরণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন তারা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও