রেল-সংকটে কিছু নাগরিক বার্তা

www.ajkerpatrika.com মামুনুর রশীদ প্রকাশিত: ০৪ আগস্ট ২০২২, ১৬:০৯

গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ভারতের একটি রেল দুর্ঘটনার পর দায় স্বীকার করে সে সময়ের রেলমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও রেলের ব্যবস্থাপনায় যাঁরা থাকেন, তাঁরাও নিজেদের দায়িত্বহীন মনে করেন না; বরং যাঁদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অন্যদিকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রী বা আমলাকে কোনো দুর্ঘটনায় নিজের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করা দূরের কথা, মানুষের প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করতেও দেখা যায়নি।



সম্প্রতি মিরসরাইয়ের দুর্ঘটনার পর মন্ত্রীকে টেলিফোনে পাওয়াই যায়নি। তিনি কোথায় ছিলেন, তা-ও জানা যায়নি। মন্ত্রীর ভয় পাওয়ার কথা নয়। কারণ, দেড়-দুই শ কোটি টাকা রেলগেট সংস্কারের জন্য দেওয়া হয়েছে, সেটা তো তিনি আসার আগেই দফারফা হয়ে গেছে। রেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঠিকাদারদের সঙ্গে নিয়ে ভাগাভাগি করে ফেলেছেন। রেলের বিষয়ে বর্তমান সরকারের যতটা আগ্রহ, তার বারোটা বাজিয়ে দেওয়ার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ সব দক্ষতা নিয়ে বসে আছে।


আমাদের সরকারি আমলারা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কাছে তাঁদের চাহিদা প্রকাশের ক্ষেত্রে খুবই দক্ষ। এই চাহিদামতো অর্থ অনুমোদন করার ব্যাপারেও তাঁদের জুড়ি নেই। এক আমলাকে চিনতাম, যিনি প্ল্যানিং কমিশনের সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পদ্মার ইলিশ, রাজশাহীর আম, রাজবাড়ীর মিষ্টি দিয়ে আসতেন। ওই সদস্য পরে বিপুল অর্থের মালিক হয়ে আমেরিকায় প্রবাস জীবনে এত দিনে হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। রেলগেট সংস্কারের জন্য ২০০ কোটি টাকা কোথায় গেল, তার হিসাব কোনো দিন পাওয়া যাবে কি না, সন্দেহ। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের রেলওয়ের একটা নিজস্ব ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থার ফলে লাইনের ত্রুটি বা জরুরি কোনো কাজ খুব দ্রুতই করা যায়। আর ইঞ্জিনের সমস্যা হলে তার জন্য বড় বড় কারখানা ছিল। সত্তরের দশকের শেষ থেকে এগুলো লোপাট শুরু হয়। নাট, বল্টু, স্ক্রু পর্যন্ত বিক্রি হয়ে যায়। থাকে শুধু রেলওয়ের ডিজেল-বাণিজ্য এবং মাঝে মাঝে ঠিকাদারদের কাজ।



আশির দশকের মাঝামাঝি একজন সচিবের সদিচ্ছার কারণে কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়; কিন্তু রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার 
ফলে লোকাল ট্রেনগুলো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কারণ, লোকাল ট্রেনগুলো থেকেই উপরি পয়সাটা বেশি পাওয়া যায়। এ সময় রেলের আমলারা সুকৌশলে রেলের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং নিজেদের পদোন্নতির সুবিধার জন্য দক্ষতা বাড়ানোর নাম দিয়ে দুটি অঞ্চলে রেলকে ভাগ করা হয়। এই পর্যায়ে শুরু হয় রেলের জমি লুণ্ঠন। ছোট ছোট ভূমিদস্যুরা রেলের জমিতে স্থায়ী দোকানপাট ও বাড়িঘর নির্মাণ করে থাকে।


পরিবারের দুস্থ আত্মীয়টির মতো রেল বেঁচে থাকে, বিপরীতে বাড়তে থাকে দেশে বাস-ট্রাক ও ছোট মোটরযান নিয়ে পরিবহনব্যবস্থা। এই পরিবহনব্যবস্থার আবার প্রধান দাবি হচ্ছে যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনের উচ্চহারে ভাড়া বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে প্রতিদিন বেশ কিছু মানুষের রক্ত চায়। নরবলি ছাড়া সে চলতে পারে না—এভাবেই চলছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করল, কিন্তু ডিজেল-বাণিজ্য ছাড়ল না। পৃথিবীর কোথাও এত বড় ডিজেল ইঞ্জিন চলে না। ইলেকট্রিক ট্রেন একমাত্র ব্যবস্থা। ভারতে একসময় বিদ্যুতের চরম ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ইলেকট্রিক ট্রেন চলেছে। কলকাতার রাস্তায় ট্রামও চলেছে। পৃথিবীর সব দেশেই বিপ্লব হওয়ার পর ট্রেন শক্তিশালী হয়েছে। কারণ, ট্রেন গণমানুষের পরিবহন। আমাদের দেশে শুরুও হয়েছিল, কিন্তু সেনাশাসনের সময় থেকেই তা মুখ থুবড়ে পড়ল। কারণ, বহু সুবিধাভোগী শ্রেণি সৃষ্টি করতে হবে—এই প্রত্যয় নিয়েই তাদের যাত্রা শুরু।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও