আইন প্রণয়নের কাজ থমকে আছে ৮ বছর
উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সংবিধানে আইন করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও ৪৪ বছরে তা হয়নি। ১৯৭৮ সালে বিধানটি সংবিধানে যুক্ত হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতের পাশাপাশি সংসদে এবং আইন কমিশন থেকে তাগিদ দেওয়া হলে ২০১৪ সালে প্রথম আইন তৈরির উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। তবে আট বছরেও আইনটির খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় আবারও আইন ছাড়াই গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ১১ জন অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংসদে আইন প্রণয়নের বিধান রাজনীতিবিদরা ৫০ বছর উপেক্ষা করেছেন। ২০২২ সালে আইনটি এমনভাবে করা হয়, যা জনগণকে ব্যাপকভাবে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
২০১৪ সালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, 'আমি চেষ্টা করছি, নীতিমালা নয়, বিচারক নিয়োগে আইনই দেব।' এরপর আইন মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া তৈরির জন্য কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি এখনও কাজ শেষ করেনি।
গত ৩০ জুন সংসদে এক সদস্যের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, বিচারপতি নিয়োগে আইনের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছে।
জানতে চাইলে গতকাল আইনমন্ত্রী সমকালকে বলেন, 'বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়নের বিষয়টি এখনও আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, ... এখন দেখা যাক। অপেক্ষা করতে হবে।'
আইনজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই আইন করেনি। কিন্তু যোগ্যতর ব্যক্তি বাছাই করার স্বার্থেই বিচারক নিয়োগে আইন করা জরুরি। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন গত ১৫ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে আইনজীবীদের দেওয়া বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, 'বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়ন করা অপরিহার্য।'
সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দেবেন। সংবিধানে বিচারক হওয়ার জন্য আইন পেশায় ১০ বছর মেয়াদ বা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার (অধস্তন আদালতের বিচারক) পদে ১০ বছর অতিবাহিত হওয়ার শর্ত আছে। আবার সংবিধানের ৯৫ (৩) অনুচ্ছেদে বিচারক নিয়োগের জন্য যোগ্যতর ব্যক্তি বাছাইয়ে আইন করার কথাও বলা আছে। ওই আইন বা নীতিমালা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে আইনজ্ঞ, সুশীল সমাজসহ নানা মহল থেকে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হচ্ছিল। ২০১২ সালের ৩ জুলাই সংসদ ও ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট আইন কমিশন থেকে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য সুপারিশ করা হয়। উচ্চ আদালতের একাধিক রায়েও বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়নের জন্য কয়েক দফা নির্দেশনা রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সমকালকে বলেন, 'একটি খসড়া চূড়ান্ত করে দিয়েছিলাম। সেটি কী হয়েছে জানা নেই।' মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ আইনটির খসড়া নিয়ে কাজ করছে, বিশেষ অগ্রগতি নেই।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, 'যে সরকারই ক্ষমতায় থাকে তারা চায় না বিচারপতি নিয়োগে আইনটি হোক। অথচ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যেই বিচার বিভাগের উচিত এই আইন প্রণয়নের বিষয়ে আরও বেশি তৎপর হওয়া। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির যোগ্যতা, দক্ষতা ও নৈতিকতার মানদণ্ড আইন ও বিধিমালার আলোকেই হতে হবে।'