অমায়িক মানুষদের ম্লান জীবন
‘দ্যাহেন, কী “অমায়িক জাম” লাগছে!’—রিকশাচালকের এ কথা শুনে বিস্ময় যতটা না হলো, তার চেয়ে বেশি হলো কৌতূহল। ঢাকার ‘গিট্টু মারা’ যানজটের কথা দেশবাসীর কারও অজানা নয়, আর নগরবাসী তো রোজ একটু একটু জীবনই খোয়াচ্ছেন যানজটের চক্করে পড়ে! এই মহানগরীর যানজটের ‘কুখ্যাতি’ দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশে পা রেখেছে সেই কবেই।
প্রতিবছর একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার বসবাসযোগ্যতার মাপকাঠিতে ঢাকার অবস্থানই বলে দেয়, শুধু যানজট নয়, নাগরিক পরিষেবাও এখানে নামকাওয়াস্তে। কিন্তু যানজটের বিশেষণ হিসেবে কে কবে ‘অমায়িক’ ব্যবহার করেছে? পরে অভিধানে দেখলাম, ‘অমায়িক’ শব্দের অর্থ সরল, অকপট, নিরহংকার, ভদ্র, সদালাপি, স্নেহশীল, প্রীতিপূর্ণ, মধুর স্বভাব। এসব শব্দের সব কটিই জানা ছিল না, কিন্তু মোটাদাগে শব্দটি সম্পর্কে যে ধারণা ছিল, তার সঙ্গে রিকশাচালকের ব্যবহারে মিলঝিল করতে না পেরেই তাঁর দিকে একটু ভালো করে তাকালাম। মেদহীন পেটা গঠন, মাঝারি উচ্চতা। মুখে হালকা দাড়ি। পরনে মলিন লুঙ্গি ও ফুলহাতা শার্ট। চল্লিশের ঘর ছোঁয়া মানুষটির সঙ্গে আলাপ জুড়তেই বোঝা গেল, তিনিই আসলে ‘অমায়িক’।
নাম আবুল বাশার। পৈতৃক বাড়ি ছিল লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট ইউনিয়নের চর জগবন্ধুতে। মেঘনার ভাঙনে দুই-দুইবার ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাঁরা। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড় আবুল বাশার। স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে হাজারীবাগ বাজারের কাছে এক বাসায় থাকেন। মেয়েটি স্থানীয় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলেটির এবার হাতেখড়ি হয়েছে। ছোটটির এখনো খুদে শিক্ষার্থী হওয়ার বয়স হয়নি।